অভিযুক্ত শিক্ষক মমিনুল হক

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বামৈ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্তৃক এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাববকরা। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মমিনুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে উপজেলা প্রশাসন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দুই বছর ধরে উপজেলার বামৈ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক এসএসসি পরীক্ষাকে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন সহকারী শিক্ষক মমিনুল হক। গত ১৬ মার্চ স্কুলের ছাদে ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষকরা দেখে ফেললে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বুধবার (২৩ মার্চ) দিনব্যাপী রাস্তা অবরোধ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে উপজেলা প্রশাসন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে আন্দোলন থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা।

যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী ঢাকা পোস্টকে জানায়, শিক্ষক মমিনুল হক অষ্টম শ্রেণি থেকে তাকে বিভিন্ন ধরনের যৌন নির্যাতন করে আসছে। একাধিকার তার লালসার শিকার হতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কথা বললে বার্ষিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করে আসছে। লোকলজ্জার ভয়ে এতদিন ধরে বিষয়টি সে গোপন রাখে।  

গত ১৬ মার্চ স্কুলের ছাদের ওপর জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। যৌন হয়রানির কারণে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তার পরিবার সাহস দেওয়ার কারণে আত্মহত্যা করতে পারেনি। তবে মানসিকভাবে সে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তার প্রতিবাদের কারণে অনেক নিরীহ শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের হাত থেকে বেঁচে গেছে। 
 
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে কুলাঙ্গার শিক্ষক মমিনুর রহমানের যৌন হয়রানির বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানালেও তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। উল্টো অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাফাই গেয়েছেন। আমার মেয়ের মতো যাতে আর কোনো ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

আরেক অভিভাক জানান, মমিনুল হকের বিরুদ্ধে স্কুলের একাধিক ছাত্রীর যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তবে ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেউ প্রতিবাদ করেনি। তার মেয়েকেও একই শিক্ষক যৌন হয়রানি করেছিল। ওই শিক্ষকের কোনো কিছুই হয়নি। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এই অভিভাবক। 

স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী মজিবুর রহমান জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককের বিরুদ্ধে অনেক ছাত্রীর অভিযাগ আছে, কিন্তু কেউ মুখ খোলে না। এখন সময় এসেছে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, আমরা সন্তানদের শিক্ষকের কাছে বিশ্বস্ততার সঙ্গে রেখে যাই, কিন্তু সেই শিক্ষক যদি লম্পট হয় তাহলে কিভাবে আমাদের সন্তানরা নিরাপত্তা পাবে। অভিযুক্ত শিক্ষককে স্থায়ী বরখাস্তসহ আইনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

বামৈ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তার বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। 

লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে নিয়মিত স্কুলে আসে সেই ব্যবস্থা করা হবে। শুনেছি মেয়েটি আত্মহতার চেষ্টা করেছিল। আমরা তাকে কাউন্সেলিং করেছি, নিয়মিত শিক্ষকরা যোগাযোগ করবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে। 

মোহাম্মদ নূর উদ্দিন/আরএআর