হবু স্বামীকে অপহরণ তরুণীর
আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলনের সঙ্গে রাবেয়া সুলতানা রিতুর পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয়। এরই মধ্যে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে মিলনকে ডেকে নেন রিতু। পরে কৌশলে বান্ধবী সুরাইয়ার বাড়িতে নিয়ে মিলনকে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়। একই সঙ্গে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে থানায় মামলা করেন পরিবারের লোকজন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তদন্তের একপর্যায়ে মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) যশোরের অভয়নগর থেকে মিলনকে জীবিত উদ্ধার করে পিবিআই। সেই সঙ্গে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন খুলনার দিঘলিয়া থানার ফরমায়েসখানা দেয়াড়া গ্রামের আলাউদ্দিন শিকদারের ছেলে শাহীন শিকদার (১৮), জামির সরদারের ছেলে আবদুস সালাম (২৪) ও সাতক্ষীরা সদরের সুলতানপুর বড়বাজার এলাকার আজমল হকের মেয়ে সুরাইয়া (২০)। অপহরণের শিকার আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলন (৩৩) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বারুইহাটি গ্রামের এমএ হাকিমের ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মামলা হয়েছে।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন যশোর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন।
তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে মিলন ও রিতুর বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু রিতু উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের জন্য নানা অপরাধে জড়িত এবং মাদকাসক্ত থাকার বিষয়টি মিলনের পরিবার জানত না। এর আগেও দুটি অপরাধে জড়িয়ে ছিলেন রিতু। কিন্তু সেসময় পার পেয়ে গেছেন। স্কুল জীবনের বান্ধবী সুরাইয়ার সঙ্গে পরিকল্পনা করে মিলনকে অপহরণ করেন রিতু। সুরাইয়া ও তার স্বামী রাজও নানা অপরাধে জড়িত। মানুষকে ব্ল্যাকমেইল ও অপহরণ করে টাকা আদায় করেন তারা।
পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলনের সঙ্গে সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার প্রতাবনগর গ্রামের এসএম হারুনুর রশিদের মেয়ে রাবেয়া সুলতানা রিতুর বিয়ে ঠিক হয়। শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মিলন বাড়ি থেকে বের হয়ে খুলনা পাওয়নিয়ার কলেজের সামনে রিতুর সঙ্গে দেখা করতে যান। পরে তারা ঘুরতে বের হন।
সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে মিলন তার বন্ধু হাফিজকে ফোন করে বিপদে আছেন; তার টাকা প্রয়োজন জানালে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাঠান হাফিজ। পরবর্তীতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মিলনের মোবাইল দিয়ে প্রথমে বাবা, পরে দুলাভাইয়ের মোবাইলে কল করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তাকে মারপিট করে কান্নাকাটির আওয়াজ শোনান। একই সঙ্গে মুক্তিপণ না দিলে মিলনকে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেন।
নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরার তালা থানায় জিডি করেন মিলনের বাবা। মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) অভয়নগর থানায় মামলা করেন মিলনের দুলাভাই শরিফুল ইসলাম। এরপর মামলার তদন্ত শুরু করে পিবিআই। ওই দিন খুলনার দৌলতপুর মাছবাজার ঘাট এলাকা থেকে শাহীন শিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে অভয়নগর উপজেলার একতারপুর গ্রাম থেকে আবদুস সালাম ও সুরাইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুরাইয়ার বাসা থেকে মিলনকে উদ্ধার করা হয়।
রেশমা শারমিন আরও বলেন, মিলন ও রিতু শনিবার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্কে ঘুরতে যান। সেখানে তাদের সঙ্গে রিতুর বান্ধবী সুরাইয়ার দেখা হয়। সুরাইয়া চা পানের কথা বলে মিলন ও রিতুকে যশোরের অভয়নগর থানার একতারপুর গ্রামের বাসায় নিয়ে যান।
একপর্যায়ে কৌশলে মিলনকে বাসায় আটকে রেখে রিতুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সুরাইয়া। পরবর্তীতে শাহীন শিকদার, আবদুস সালাম, সুরাইয়া ও হাবিব রাজ বাড়িতে আটকে রেখে মিলনকে মারপিট করে। এরপর মিলনের পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
জাহিদ হাসান/এএম