প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ওয়াদা করেছিলাম প্রতিটি মানুষ আলো পাবে। আজ দেশের প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালাতে পেরেছি, এটাই সবচেয়ে বড় কথা। কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না, প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

সোমবার (২১ মার্চ) ভেলা ১টা ২ মিনিটে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) কর্তৃক নির্মিত ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর কোল জেটিতে ২০০ নৌকা থেকে পতাকা নাড়িয়ে ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে তাকে অভিবাদন জানানো হয়।

নৌকায় গান পরিবশেনসহ বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও স্লোগানে মুখরিত হয় রাবনাবাদ নদী এলাকা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে নৌকায় থাকা জেলেদের শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে তার মোবাইল ফোন থেকে নৌকা প্রদর্শনীর দৃশ্য ধারণ করতে দেখা গেছে। পরে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

মুজিব বর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, পবিত্র রমজান ও আগামী ঈদ উপলক্ষে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে এ অঞ্চলের মানুষের উপহার হিসেবেও ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল এখন আর অবহেলিত নয়। ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হতো এ অঞ্চল। এখন আর হবে না।’

১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করার সময় বিদ্যুতের জন্য মানুষের হাহাকার ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ওয়াদা করেছিলাম, প্রত্যেক মানুষের ঘর আলোকিত হবে, আজ সেটি হয়েছে।’

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী (বীর বিক্রম) বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের ৭৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় থাকলেও বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ-সেবা পাচ্ছে। আজ এ অর্জন প্রধানমন্ত্রীর অর্জন। তার নেতৃত্বগুণেই এটি সম্ভব হয়েছে।

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশ্বের ১১তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে।

১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্ধেক মালিকানা বাংলাদেশের, বাকি অর্ধেক মালিকানা চায়না পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল)।

মুহিবুল্লাহ/এনএ