চিকিৎসকের রেজিস্টার খাতায় নাম নেই সেই দুই শিশুর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাপা সিরাপ খেয়ে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে যাওয়া সেই দুই শিশুর নাম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে থাকা রেজিস্টার খাতায় পাওয়া যায়নি। ফলে ওই দুই শিশু হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের দেখা পেয়েছিল কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
যদিও স্বজনরা বলছেন, ঘটনার দিন দুই শিশুকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভালো করে না দেখেই ভালো আছে জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে বেশি করে পানি ও টক খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বর ওঠায় গত ১০ মার্চ বিকেলে জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেন ওরফে সুজন খানের দুই শিশু সন্তান ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খানকে (৫) বাড়ির পাশের একটি ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ এনে খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর ওই দুই শিশু বমি করতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই দুই শিশুর মা লিমা বেগম জানান, জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক ভালো করে না দেখেই শারীরিক অবস্থা ভালো আছে জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে বেশি করে পানি ও টক খাওয়ানোর কথা বলেন। এরপর বাড়ি ফেরার পথে ইয়াছিন এবং বাড়িতে নেওয়ার পর মোরসালিনের মৃত্যু হয়।
লিমা বেগম বলেন, সদর হাসপাতালে যদি সঠিক চিকিৎসা পেত, তাহলে হয়তো আমার দুই ছেলে এভাবে মারা যেত না। স্টমাক ওয়াশের কথা বললেও চিকিৎসক কথা শোনেনি।
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি কিংবা চিকিৎসকের কোনো অবহেলা ছিল কি না তা অনুসন্ধানের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, তারা দুইটা টিকিট কিনেছে। এই রেজিস্টার খাতায় নাম আছে। কিন্তু জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের কাছে যে রেজিস্টার খাতা আছে, সেটিতে দুই শিশুর নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। এতে বোঝা যাচ্ছে চিকিৎসকের সাথে রোগীর যোগাযোগ হয়নি। রোগীকে চিকিৎসক সেবা দিতে পারেনি, অথবা এমনও হতে পারে স্টমাক ওয়াশের ভয়ে রোগী চলে যেতে পারে। অথবা চিকিৎসকসহ হাসপাতালে যারা ছিল, তাদের কোনো গাফিলতি থাকতে পারে।
পুরো ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান ডা. ওয়াহিদুজ্জামান।
আজিজুল সঞ্চয়/আরআই