প্রাণ ফিরেছে কুয়াকাটায়
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে প্রাণ ফিরেছে। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকেল থেকে শুক্রবার (৪ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটায় এসেছেন। সৈকতে নেচে গেয়ে আনন্দ মেতেছেন তারা। সমুদ্রের নোনা জলে গা ভাসিয়ে উপভোগ করছেন আনন্দ ভ্রমণ।
এছাড়া গঙ্গামতি, ঝাউবাগান, শুঁটকি পল্লী, ফিশ ফ্রাই মার্কেট, বৌদ্ধ বিহার ও ইলিশ পার্কেও পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পর্যটকদের ভিড়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বুকিং রয়েছে হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ রুম।
বিজ্ঞাপন
হাজার হাজার পর্যটকের সৈকতে গোসলের দৃশ্য দেখে আনন্দিত এখানকার পর্যটকনির্ভর ব্যবসায়ীরা। চলতি পর্যটন মৌসুমে শুক্রবার সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছেন বলে জানিয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। করোনার বিধি নিষেধ তুলে নেওয়ায় দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটকদের আগমনে বেশি খুশি হয়েছেন সৈকত এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের বেচাকেনা দ্বিগুণ হচ্ছে।
সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, অন্যান্য শুক্রবারের চেয়ে আজ অনেক বেশি পর্যটক এসেছে। বেচাকেনা খুব ভালো হয়েছে। আমরা খুশি হয়েছি। এভাবে প্রতিদিন পর্যটক থাকলে পেছনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব।
কুয়াকাটা সংলগ্ন লতাচাপলী ইউনিয়নের পুনামাপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন শরীফ বলেন, আমি প্রতি শুক্রবারই কুয়াকাটা সৈকতে ঘুরতে আসি। আমার দেখা মতে আজ সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছে। এতো সংখ্যক পর্যটক বিগত কয়েক মাসে আসেনি। দেখে মনে হচ্ছে কুয়াকাটা সৈকত যৌবন ফিরে পেয়েছে।
কুমিল্লা থেকে সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এই প্রথম কুয়াকাটায় এসেছি। খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে সমুদ্রে গোসল করে খুবই আনন্দ পেয়েছি। সময় পেলে আবার আসব।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর কুয়াকাটা বৃহস্পতিবার-শুক্রবার নির্ভর হয়ে পড়েছে। ছুটির দিন ছাড়া তেমন একটা পর্যটক থাকে না। বিগত বছরগুলোতে এ রকম ছিল না। প্রতিদিনই কিছু না কিছু পর্যটক আসতো। এ বছর সপ্তাহের অন্যান্য দিন কম সংখ্যক পর্যটক আসছে। এটা ব্যবসায়ীদের জন্য চিন্তার বিষয়। সপ্তাহের প্রতিদিন পর্যটক আনার জন্য কাজ করছে ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, আমরা গত কয়েক মাস ধরে বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। কুয়াকাটার জন্য এটি উদ্বেগের বিষয়। ছুটির দিন ছাড়াও কুয়াকাটায় পর্যটক আনার জন্য আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। তাই সপ্তাহের রোববার-বুধবার প্যাকেজ ট্যুর অফারের চিন্তা করছি। আশা করছি এতে সুফল আসবে।
কুয়াকাটা সৈকত ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকরা সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের তালে তালে গোসল করছেন। মোবাইলে ফোনে সেলফি তোলায় ব্যস্ত অনেকে। ওয়াটার বাইকে গভীর সমুদ্রে যাচ্ছেন কেউ কেউ। ছাতার নিচে বসে সমুদ্রের রূপ অবলোকন করছেন অনেকে। টিউব নিয়ে সাঁতার কাটছে কিশোরী-কিশোরীরা।
রাজশাহী সদর উপজেলা থেকে সপরিবারে কুয়াকাটায় এসেছেন আবদুল্লাহ মামুন-সালমা বেগম দম্পতি। তারা বলেন, এই প্রথম পরিবারের সবাই মিলে কুয়াকাটায় এসেছি। খুবই ভালো লেগেছে। সময় পেলে আবার আসব। এখানকার পরিবেশ খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে সৈকতের দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করেছে।
কুয়াকাটা সৈকতে বেঞ্চ-ছাতা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, গত শুক্রবারের চেয়েও আজ অনেক পর্যটক এসেছে। আশা করছি দিন দিন পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। আমরা খুশি।
আবাসিক হোটেল সি-ভিউয়ের ম্যানেজার মো. সোলায়মান ফরাজী বলেন, গত শুক্রবারের চেয়ে আজ অনেক বেশি পর্যটক এসেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এবং আজ শুক্রবার আমার হোটেলের সবগুলো রুম বুকিং ছিল।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পুলিশ পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, আজ অনেক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। আমরা পর্যটকদের মাস্ক পরতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করছি। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে টহল জোরদার করা হয়েছে।
কাজী সাঈদ/আরএআর