‘ক্ষতি যা হওয়ার হইছে, এহন পোলার লাশটা আইন্না দ্যান’
ইউক্রেনের অলভিয়া নৌবন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিতে রুশ বাহিনীর রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের (৩৪) বাড়িতে মাতম চলছে। ছেলের মৃত্যুর খবরে বাবা বাকরুদ্ধ। আর মা কান্না করতে করতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। যেভাবেই হোক ছেলের মরদেহ চান তারা।
নিহত হাদিসুর রহমান আরিফ বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের অবসরপ্রপ্ত শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, চার ভাই বোনের মধ্যে হাদিসুর রহমান আরিফ দ্বিতীয়। তিনি ২০১০ সালে এইসএসসি পাস করেন। এরপর বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে সিঙ্গাপুরের একটি জাহাজে যোগদান করেন হাদিসুর। পরে প্রোমোশন নিয়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন। এরপর পণ্য নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়েন। গতকাল বুধবার সেখানে তাদের জাহাজ লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় রাশিয়ান সেনারা। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আরিফ।
এদিকে নিহত হাদিসুরের মরদেহ বাড়িতে আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে হাদিসুরের ছোট ভাই তারেক হোসাইন বলেন, ভাইয়া ইউক্রেনে আটকে পরার কথা আগেই আমাদের জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার (০২ মার্চ) রাতে সর্বশেষ ভাইয়ার সঙ্গে কথা হয়। কথা বলা অবস্থায় তাদের জাহাজে হামলা চালায় রাশিয়ান সৈন্যরা। আমার ভাই ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে মারা যান। আমার ভাইকে তো আর ফিরে পাব না, এখন আমরা শুধু লাশটা ফিরে পেতে চাই।
হাদিসুর রহমান আরিফের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার তিন পোলার একজন আর নাই। বাবারে শেষ দেখা দেখতেও পারলাম না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমরা যেন আমাগো হাদিসুরের লাশটা পাইতে পারি। ক্ষতি যা হওয়ার হইছে, এহন পোলার লাশটা আইন্না দ্যান আমনেরা।’
হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, মরদেহ আনার ব্যাপারটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তারা কোনো নির্দেশনা দিলে আমরা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ইউক্রেনের বন্দরে থাকা পণ্যবাহী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলা চালায় রাশিয়ান সেনারা। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। বাকি ২৮ জন নিরাপদে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হুসাইন।
আরএআর