বিয়ে করতে না পেরে বরকে ফাঁসাতে ইউপি সদস্যের কৌশল
দীর্ঘদিন ধরে এক তরুণীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য প্রদীপ এক্কা (৪২)। বিয়ের জন্য তরুণীর পরিবারকে নানাভাবে চাপও দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই বিয়েতে রাজি হয়নি কিশোরীর পরিবার।
উল্টো অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। পাঁচ দিন পরেই বিয়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাত্রকে ফাঁসাতে মাদক নাটক সাজিয়েছিলেন ইউপি সদস্য। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় সেই ফাঁদে নিজেই আটকা পড়েছেন এই ইউপি সদস্য।
অভিযুক্ত প্রদীপ এক্কা গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য। বুধবার (২ মার্চ) দিবাগত রাতে তার সহযোগী মিল্টন (২১) গ্রেফতার হয়েছেন পুলিশের হাতে। মিলনের রেখে আসা স্থান থেকে ৯ বোতল ফেনসিডিল এবং ১০০ গ্রাম হেরোইন পেয়েছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতার মিল্টন ইউপি সদস্য প্রদীপ এক্কার প্রতিবেশী। পুলিশের জেরার মুখে ইউপি সদস্যের জারিজুরি ফাঁস করে দেন মিল্টন। এ নিয়ে তাদের দুজনের নামে রাতেই মামলা হয়েছে গোদাগাড়ী মডেল থানায়। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ওই ইউপি সদস্য।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়নের পূজাতলা এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন প্রদীপ এক্কা। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি তার পরিবার।
শেষে একই ইউনিয়নের চৌদুয়ার এলাকায় এক যুবকের সঙ্গে তরুণীর বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাত্রকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে নিজেই বিয়ের পাত্র হওয়ার পরিকল্পনা করেন প্রদীপ।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা মাফিক সহযোগীর মাধ্যমে মাদক সংগ্রহ করেন প্রদীপ। এরপর সহযোগীকে দিয়ে তরুণীর হবু বরের বাড়িতে সেই মাদক রেখে আসেন। পরে জেলা গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) সেই মাদকের খবর দেন।
খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিন সেখানে অভিযান চালান। তিনি প্রথমে মাদক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে ইউপি সদস্যের সহযোগী মিল্টন এসে স্থান দেখিয়ে দেন। সেখান থেকে ৯ বোতল ফেনসিডিল এবং ১০০ গ্রাম হেরোইন পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে নেয় হবু বরেকে। তাকে জিজ্ঞাবাদে সন্দেহ হয় পরিদর্শক রুহুল আমিনের। এরপর তথ্য প্রদানকারী মিল্টনকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তারপর কেঁচো খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে সাপ। পুলিশ উদঘাটন করে আসল রহস্য।
জেলা ডিবির পরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, হবু বরকে মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট মনে হচ্ছিল না। এরপর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় হেফাজতে নেওয়া হয় তথ্য প্রদানকারী মিল্টনকে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনিই ইউপি সদস্য প্রদীপের পরিকল্পনা ফাঁস করেন। পরে প্রদীপকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু টের পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় ইউপি সদস্য প্রদীপের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল জানান, ওই কিশোরীর ভাই তাকে জানিয়েছিলেন ইউপি সদস্য প্রদীপ তার বোনকে উত্ত্যক্ত করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি থানায় অথবা পরিষদে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি কিশোরীর পরিবার।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রদীপের সঙ্গেও কথা বলেন। প্রদীপ দাবি করেন যে ওই তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এর বাইরে বেশি কিছু জানেন না বলে জানান চেয়ারম্যান।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এনএ