‘ইউক্রেন থেকে ফিরেই ঘরের কাজ ধরব’
‘আমাদের আর ভাঙা ঘরে থাকা লাগবে না। বাড়িতে এসে যেভাবেই হোক ঘরের নির্মাণকাজ ধরব।’ মৃত্যুর আগে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইলে এমনটা ছিল হাদিসুরের শেষ কথা।
বুধবার (৩ মার্চ) স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রুশ বাহিনীর রকেট হামলায় নিহত হন হাদিসুর রহমান। বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাড়িতে বইছে মাতম। এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোক।
বিজ্ঞাপন
এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
নিহত নাবিক হাদিসুর রহমান আরিফ (৩৩) কদমতলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে।
নিহত হাদিসুরের ছোট ভাই তারেক হোসাইন বলেন, মৃত্যুর আগে ভাইয়া আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ফোনে ভাইয়া বলেন, আমাদের আর ভাঙা ঘরে থাকা লাগবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক ঘরের নির্মাণকাজ ধরব।
তারেক আরও বলেন, ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন। মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ভাইয়ার অনেক স্বপ্ন ছিল এলাকার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর একটা বাড়ি করার। কিন্তু ভাগ্য আর সেই সুযোগ দিল না। একনজর হলেও আমি আমার ভাইয়ার লাশটা দেখতে চাই।
স্বজনরা জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করা অবস্থায় ২৯ জন ক্রুসহ আটকা পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি। ওই দিনই বাড়িতে আটকে পড়ার খবর জানান হাদিসুর রহমান আরিফ। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি পরিবারের সঙ্গে। ওই এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকায় তার স্বজনরা একাধিকবার কল দিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
তারা আরও জানান, বুধবার (২ মার্চ) রাতে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য নেটওয়ার্কের সিগন্যাল পেতে জাহাজের কেবিন থেকে বেরিয়ে ব্রিজে আসেন হাদিসুর। এর কিছুক্ষণ পরেই জাহাজটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় রাশিয়ান সেনারা। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান হাদিসুর।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার চাচাতো ভাই মাদরাসাশিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে হাদিসুর। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে লেখাপড়া করে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এবার বাড়ি ফিরলে তাকে বিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন দুশ্চিন্তায় আছি হাদিসুরের মরদেহ দেশে কীভাবে আনব। যুদ্ধের কারণে যেখান থেকে জাহাজই বের হতে পারছে না, সেখানে হাদিসুরের মরদেহ নিয়ে আসাটা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ইউক্রেনের বন্দরে থাকা পণ্যবাহী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলা চালায় রাশিয়ান সেনারা। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। বাকি ২৮ জন নিরাপদে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হুসাইন।
এনএ