পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের টেলিভিশন ও অনলাইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রঞ্জক রিজভী ও নাসির পাঠান। ওই দিন বিকেলে তারা দুজন ভাড়া করা মটোরসাইকেলে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে ঝাউবনের দিকে ঘুরতে বের হন। সেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক হেনস্তার শিকার হন তারা।

২৭ ফেব্রুয়ারি রঞ্জক রিজভী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘ট্যুরিস্ট পুলিশের জয় হোক, আর যাব না কুয়াকাটা’ শিরোনামে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি পুলিশি হেনস্তার বর্ণনা দেন। ফেসবুকে এটি বেশ আলোচিত হয়। পর্যটকদের সঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশের অশোভন আচরণের প্রতিবাদ জানান অনেকে। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা এমন অসৌজন্যমূলক আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংবাদিক মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

পর্যটকদের গায়ে হাত তোলা, অশ্লীল আচরণ ও বিনা কারণে হয়রানিসহ টুরিস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তারা। অনেকে জানান, অভিযোগ নিয়ে টুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছে গেলেও কোনো লাভ হয় না। উল্টো আরও হেনস্তার শিকার হতে হয়।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (কুটুম) ও কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, এখানকার ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। ট্যুরিস্টদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হবে তারা তা জানেন না। তাদের সেবার মান এবং নীতি-নৈতিকতা নিয়ে প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল খালেক বলেন, ট্যুরিস্টদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা আমাদের কাম্য নয়। তাদের সেবা দেওয়াই আমাদের কাজ। তারপরও কোনো কোনো পুলিশ সদস্যের সঙ্গে পর্যটকদের তর্কাতর্কি কিংবা কথা কাটাকাটির মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনার খবর আসে। বিষয়টি আমলে নিয়ে কীভাবে সেবার মান বাড়ানো যায় সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে কাজ করছি। কোনো পুলিশ সদস্য পর্যটকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সাংবাদিক রঞ্জক রিজভীর স্ট্যাটাসে যা লেখা ছিল

সাংবাকিদকদের ট্রেনিং করাতে কুয়াকাটা গিয়ে দেখে এলাম ট্যুরিস্ট পুলিশের বাহাদুরি। ২৫ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সমুদ্র সৈকতের লেম্বুরচর পার হয়ে ঝাউবনে ঘুরতে গিয়েই পড়লাম ঝামেলায়। দেখলাম ঝাউবনের শেষপ্রান্ত দিয়ে অনেকেই সৈকতে গেছেন। আমরা সেখানে একটি ভিডিওতে সুন্দরবনের পূর্ব প্রান্ত দেখানোর চেষ্টা করলাম। দূর থেকে বাইক চালক (গাইড) জলিল আমাদের ডেকে সেখান থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দিলেন। বের হয়ে আসতেই ট্যুরিস্ট পুলিশের কনস্টেবল (নেমপ্লেট ছিল না) গাইডকে যেভাবে আক্রমণ করলেন, তার চিৎকার আর হিংশ্রতা দেখে কয়েকশ পর্যটক রীতিমতো হতভম্ব। 

পরে সেখানে এলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই জুয়েল। বললাম এখানে কোনো অফিসার আছেন? কথা বলতে চাই। এ সময় এসআই জুয়েল বললেন, আপনি জানেন? নির্বাহী ক্ষমতায় এখন আপনাকে আমি গ্রেপ্তার করতে পারি? কয়েকশ পর্যটক দেখলেন। পরে আমাদের চালককে তারা নিয়ে যান। আমরা বিপাকে পড়লাম! সেখান থেকে কীভাবে ফিরব! কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে ওই জায়গার দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। নিরুপায় হয়ে আমরা তিনজন সেখান থেকে হাঁটতে শুরু করলাম।

এরই মধ্যে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি জেনে ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টরকে অবহিত করেন। সন্ধ্যার পর পুলিশ বক্সে ইন্সপেক্টর সাহেব চায়ের নিমন্ত্রণ দিলেন। ইন্সপেক্টর সাহেব পুরো বিষয়টি শুনে দুঃখ প্রকাশ করলেন। এসআই জুয়েল এবং সেই কনস্টেবলকে ডাকলেন। সেখানে আবারও তারা যে দম্ভ দেখালেন, তাতে অবাক হলাম! মনে হলো, তারা কোনো শৃঙ্খলাতেই নেই। দুই ট্যুরিস্ট পুলিশের হুঙ্কার শুনে পুলিশ বক্সের সামনেও উৎসুক জনতা ও পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনা যেসব পর্যটকের সামনে ঘটেছে, তাদের কাছে কী বার্তা গেল?

ট্যুরিস্ট পুলিশের আচরণ বদলাতে হবে। ট্যুরিস্ট পুলিশের হায়েনার মতো আচরণ নিশ্চয়ই পর্যটকরা পছন্দ করেন না। এই অবস্থা স্থায়ী হলে কতিপয় ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা সৈকতের বাঘ প্রমাণ করতে পারবে ঠিকই, কিন্তু পর্যটনখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ক্ষতি হবে দেশের...।

কাজী সাঈদ/আরআই