গরুর খামারের আড়ালে চলত মহাসড়কে গরু ডাকাতি। আর এসব লুণ্ঠিত গরু সেই খামারে সপ্তাহ খানেক রেখে সুযোগ মতো কয়েক ধাপে বাজারে বিক্রি করত ডাকাত দল। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি ডাকাতি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এমন ডাকাত চক্রের সন্ধান পেয়েছে। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনায় ছয় ডাকাতকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ৪১টি গরু উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০১ মার্চ) দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মরন দাস ওরফে সুমন ওরফে তাপস (৩৫), আসাদুজ্জামান বাবু (৩০), মো. শহিদুল ইসলাম (৪০), মো. আব্দুল মালেক (৪০), দুর্জয় রাজবংশী (২৮) ও মো. আল-আমীন (২৯)।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে দিনাজপুরের আমবাগী গরুর হাট থেকে গরু ব্যবসায়ী ছাদেক ৭টি গাভি, ২টি বকনা বাছুর ও ৫টি ষাঁড়সহ ১৪টি গরু ক্রয় করে কুমিল্লার লালমাই এলাকায় ফিরছিলেন। রাত দেড়টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের মোজার মিল সানসিটি সংলগ্ন কাঠ বাগানের সামনে টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস তাদের গরু বহনকারী ট্রাকটির গতিরোধ করে। পরে মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন এসে গরুর মালিক ছাদেক ও তার ছেলে রাকিবকে চোখ, মুখ, হাত-পা বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। সাভারের গেন্ডা এলাকায় যাওয়ার পর ডাকাতরা ওই দুইজনকে ছেড়ে দিয়ে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় ২০ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর থানায় মামলা হলে পুলিশ গতকাল সোমবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জিরানী বাজার থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাক আটক করে। এ সময় ট্রাকের সহযোগী রাজ্জাক দৌড়ে পালিয়ে গেলেও সুমন নামে একজনকে পুলিশ ধরে ফেলে। পরবর্তীতে সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ নাল্লাপোল্লা গ্রামে সাদিয়া ডেইরি ফার্ম নামে তার একটি গরুর খামার আছে। পুলিশ ওই খামারে গিয়ে ৪টি গাভি, ২টি বকনা বাছুর, ৩৫টি ষাঁড়সহ ৪১টি গবাদি পশু ওই খামারে পায়। পুলিশ গবাদিপশু ক্রয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। 

একপর্যায়ে পুলিশের সন্দেহ হলে মামলার বাদীকে জানানো হয় এবং বাদী খামারে গিয়ে তার ডাকাতি হওয়া ৪টি গাভি, ২টি বকনা বাছুর এবং ৫টি ষাঁড়সহ ১১টি গরু শনাক্ত করেন। পরে আশুলিয়া থানার জিরানীবাজার এলাকার আমান উদ্দিনের বাড়িতে সুমনের বাসায় তল্লাশি করে গরু বিক্রির নগদ ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৫০ টাকা জব্দ করে পুলিশ। ডাকাতির প্রধান হোতা সুমনের দেওয়া তথ্য অনুসারে পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানায়, সংঘবদ্ধ এ ডাকাত দলটি মূলত শীতকালে রংপুর থকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে ডাকাতি করে থাকে। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার বেলাল হোসেন, কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবে খোদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিহাব খান/আরএআর