এসএসসির ফরম পূরণ : একাল-সেকাল
বহুদিন পর স্কুলে গিয়েছিলাম এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। অনেক আনন্দ পেলাম। আমাদের আনন্দের কারণ অনেকদিন পর একে অপরের দেখা পাওয়া। অথচ ফরম পূরণের সময় আমাদের বাবা-মায়েদের আনন্দ ছিল অন্যরকম। তাদের কাছে পরীক্ষার ফরম পূরণ করাটাই ছিল আনন্দের ব্যাপার। সব তথ্য যাতে নির্ভুল হয়, সে জন্য তাদের বারবার সাবধান করতেন অভিভাবক ও শিক্ষকেরা। তারা চিঠি লিখতেন মুরব্বীদের কাছে। দোয়া চাইতেন এবং উপহার পেতেন।
আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগে পায়রার পায়ে চিঠি বেধে পাঠানো হতো। তারও অনেক পরে এ দেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় চিঠি যেতে নাকি সময় লাগতো কয়েক মাস। অবশ্য সেই সময়ের কথা বলছি না। বলছি আমাদের আগের প্রজন্মের টিনএজ বা কিশোরকালের কথা। মানে আমাদের মা-বাবারা যখন এসএসসি পরীক্ষার্থী, গল্পটা সেই সময়ের। ঠিক গল্প না, এটি সত্য ঘটনা।
বাংলাদেশ ততদিনে স্বাধীন। সময়টা আশি বা নব্বই দশকের। মা-বাবাদের অনেকেই কিশোর, আমাদের মতো পরীক্ষার্থী। তখন না কি ডাক বিভাগে চিঠি পাঠালে দেশের মধ্যে চার-পাঁচদিন লাগত তা প্রাপকের কাছে পৌঁছাতে। টেলিফোন ততদিনে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে পুরোাপুরি আসেনি। তবে টেলিগ্রাম ও ফ্যাক্স ছিল।
বিজ্ঞাপন
সেই সময়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার বিষয়টি ছিল অন্যরকম ব্যাপার। এর সঙ্গে আনন্দ, উপহার, দোয়ার সম্পর্ক ছিল। সেই সময়ের বাবা-মায়েরা তাদের দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ অন্য আত্মীয়দের কাছে চিঠি লিখে দোয়া চাইতেন। এর সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরীক্ষার্থীরা পেয়ে যেতেন দোয়া, উপদেশ ও ভালোবাসা মোড়ানো ফিরতি চিঠি। এর সঙ্গে থাকত নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়ার আশ্বাস বা সালামি।
ভাবতেই অবাক লাগে আজ যেখানে কারও সঙ্গে কথা বলতে বা ভিডিওকলে দেখতে সাত মিনিটও অপেক্ষা করার প্রয়োজন হয় না, সেখানে তারা অপেক্ষা করতেন সাত দিন! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বদলে যায়। এ জন্যই হয়তো যে ফরম পূরণের বিষয়টি আমাদের মা-বাবার কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ বা মূল্যবান ছিল, তা আমাদের কাছে কিছুই মনে হলো না। কোনও আবেগই কাজ করল না!
আমরা তো তাও স্কুলে গিয়ে ফরম ফিলাপ জিনিসটা পেলাম। কে জানে, আমাদের পরের প্রজন্মের হয়তো এসবের দরকারই হবে না। অনলাইনে টাকা পাঠিয়ে দেবে। তারা আমাদের কাছে এখনকার গল্প শুনবে, আর অবাক হবে। তারা হয়তো বলবে, স্কুলে গিয়ে টাকা জমা দেওয়ার দরকার কেন ছিল? যেমন, এখন আমরা ভেবে পাই না, আমাদের মা-বাবার হাতে ফরম পূরণ করা এবং চিঠি লেখাসহ নানা আয়োজনের কেন দরকার ছিল।
আমরা এখন করোনা মহামারির মধ্যে বসবাস করছি। ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ তো হলো। তবে স্কুল-কলেজ খোলা যেভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে (যদিও যৌক্তিক কারণে) তাতে এসএসসি পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত হবে কি-না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। পরীক্ষাটা হলেই ভালো। তা না হলে আমাদের ব্যাচের পাশেও এইচএসসি ২০২০ ব্যাচের মতো লেগে যাবে ‘অটোপাশের’ সিল। তাই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হলেও এসএসসি পরীক্ষা যেন হয়, সেই প্রত্যাশা করছি।
এসএসসি পরীক্ষার্থী, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, ঢাকা।
এইচএন/এএ