ক্যাম্পাসে ভারী যান বন্ধে ঢাবি প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে কবে?
ক্যাম্পাসে ভারী যানবাহন বন্ধের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী হিমেলের মৃত্যুর ঘটনার পর দাবিটি আরও জোরালো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কারো প্রাণ যাওয়ার আগেই যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়। না হলে রাবির মতো ঘটনা ঢাবিতে ঘটতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গেট, মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, ভিসি চত্বর, দোয়েল চত্বর, কার্জন হল, রোকেয়া হল, রাজু ভাস্কর্য ও এস এম হলের সামনের এলাকা দিয়ে বাস, ট্রাক, বড় কাভার্ডভ্যানের মতো ভারী যানবাহন অনেকটা বেপরোয়াভাবেই চলছে। চলার পথে একটু অসতর্ক হলেই শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
গত কয়েকদিনে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে যাওয়া বাস, ট্রাক, লেগুনাসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন আটকাতে দেখা গেছে একদল শিক্ষার্থীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন আগে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিলেও এখন আর কোনো খোঁজ নেই। গত বছর পুলিশ নিয়ে ঢাবি প্রশাসন কয়েকটি অভিযান চালিয়েছিল। তবে কার্যত কোনো ফল আসেনি।
অনিরাপদ ক্যাম্পাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই ঢাবিতেই এরকম দৃশ্য (রাবির মতো দুর্ঘটনা) দেখতে হবে।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিসি চত্বর থেকে মল চত্বর যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে হয়। এ রাস্তায় দ্রুতগতিতে সিএনজি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারের মতো ছোট যানের মতো ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের মতো ভারী গাড়িও চলে। বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি। গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি স্থানে নেই কোনো গতিরোধক। নেই গতি মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে রাস্তা পারাপারের সময় খুব ভয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় নতুন শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার হতে অন্যদের সাহায্য নিতেও দেখেছি। এটা সত্যিই দুঃখজনক। এসব বিষয়গুলো দেখার কেও নেই। সড়কে কেউ মারা না গেলে হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও হুঁশ ফিরবে না!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর একরকম আতঙ্ক নিয়েই চলতে হয়। অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল এখানে বেশি। টিএসসিতে বসলে মনে হয় না কোনো ক্যাম্পাস এটি, মনে হয় যেন কোনো পাবলিক স্টেশনে বসে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো নজর নেই।
কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ-ঊর রেহমান মিশু বলেন, ভারী যান চলায় ক্যাম্পাসে রাস্তা পার হতে অন্তত দুই মিনিট দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। অতি জরুরি পরিবহন ছাড়া ক্যাম্পাসে সব ধরনের পরিবহন চলাচলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। নিজ ক্যাম্পাসে মৃত্যু অমানবিকও বটে। রাবির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য হলো অনেকগুলো প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে গেছে। যারা ক্যাম্পাসকে রোড হিসেবে ব্যবহার করে, তাদের কাছে আমরা বারবার সহযোগিতা চেয়েছি। এখন কিছু হলে দায়-দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারকেও আমরা লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি ২৪ ঘণ্টা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। রোড ম্যাপ অনুযায়ী চললে ভারী যানবাহন ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে যাওয়ার কথা নয়। ট্রাফিক বিভাগ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এসব নিশ্চিত করবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা রেখে বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সংশ্লিষ্টদের আবারো অবহিত করা হবে।
অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ রাস্তায় নেমে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো গাড়ি থামাতে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। তাদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেটি যেন তারা আমাদের জানায়। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, এবং তা অব্যাহত থাকবে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ট্রাকচাপায় হিমেল নামে এক শিক্ষার্থী মারা যান। এ ঘটনায় প্রশাসনের অবহেলাকেই দায়ী করেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে দায়িত্বে অবহেলার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও দিয়েছে রাবি প্রশাসন।
এইচআর/আরএইচ