ঢাবির হল কমিটিতে আঞ্চলিকতায় প্রাধান্য, শীর্ষে ময়মনসিংহ
দীর্ঘ সময় পর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ১৮টি হলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আগামী এক বছরের জন্য কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
বিজ্ঞাপন
দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ও ঢাবির শীর্ষ এই চার নেতার অঞ্চল থেকেই সবচেয়ে বেশি নেতা পেয়েছে হলগুলো। তার মধ্যে সনজিত চন্দ্র দাসের ময়মনসিংহ জেলা থেকেই সাতজন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। জামালপুর, নেত্রকোনা জেলাসহ ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বমোট নয়জন বিভিন্ন হলের শীর্ষ পদে স্থান পেয়েছেন।
লেখক ভট্টাচার্যের খুলনা বিভাগ থেকে সাতজন, আল নাহিয়ান খান জয়ের বরিশাল বিভাগ থেকে পাঁচজন এবং সাদ্দাম হোসেনের রংপুর বিভাগ থেকে এসেছেন চারজন। সর্বমোট ৩৬ জনের মধ্যেই ২৫ জনই এসেছেন এ চার নেতার বিভাগ থেকে। বাকি ১১ জন এসেছেন অন্য চার বিভাগ থেকে। ঢাকা থেকে চারজন, চট্টগ্রাম থেকে পাঁচজন, সিলেট থেকে একজন, রাজশাহী থেকে একজন কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল কমিটিতে আঞ্চলিকতার প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও কার্যত ‘শূন্য হাতে’ ফিরছেন অনেকে। ভাগ্য সহায় হলে তাদের কারো কারো ঢাবি ও কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির কম গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ঠাঁই হয়। অনেকে এসব ক্ষোভে-দুঃখে রাজনীতিই ছেড়ে দেন।
নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে পদবঞ্চিত অনেকেই অভিযোগ করেন, আঞ্চলিকতার জন্য অনেক যোগ্যরাও বাদ পড়েছেন। নেতাদের এলাকার প্রার্থীরা সবসময়ই আলাদা সুবিধা পান। এভাবে যোগ্যতার চেয়ে আঞ্চলিকতা প্রাধান্য পেলে সংগঠনটির ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা তাদের।
ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে নেতৃত্বে এসেছেন, মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সভাপতি মারিয়াম জামান খান সোহান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুন, বিজয় একাত্তর হলের সভাপতি সজীবুর রহমান সজীব, রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক অন্তরা দাস, বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল হাওয়া আঁখি, বেগম সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি পূজা কর্মকার, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকার (জামালপুর) ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা (নেত্রকোনা)।
খুলনা থেকে এসেছেন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, জগন্নাথ হলের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ, ফজলুল হক মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসিব মুক্ত, অমর একুশে হলের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হাসান সোহাগ, শামসুন নাহার হলের সাধারণ সম্পাদক নুসরাত রুবাইয়াত নীলা ও বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের সভাপতি রাজিয়া সুলতানা কথা।
বরিশাল থেকে নেতৃত্বে এসেছেন, স্যার এ এফ রহমান হলের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন হলে সভাপতি মো. সুমন খলিফা, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি তানভীর সিকদার, শামসুন নাহার হলের সভাপতি খাদিজা আখতার উর্মি ও বেগম সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ সম্পাদক রিমা আক্তার ডলি।
রংপুর থেকে এসেছেন, মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান (পঞ্চগড়), স্যার এ এফ রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক মুনায়েম শাহরিয়ার মুন (রংপুর), শহীদুল্লাহ হলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (কুড়িগ্রাম) ও অমর একুশে হলের সভাপতি এনায়েত এইচ মনন (ঠাকুরগাঁও)।
ঢাকা বিভাগ থেকে এসেছেন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে সভাপতি শহিদুল হক শিশির (শরীয়তপুর), মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত (মাদারীপুর), ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম (গাজীপুর) ও শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম (গাজীপুর)।
চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হোসেন (চট্টগ্রাম), পল্লীকবি জসীমউদ্দীন হলে সাধারণ মো. লুৎফুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) বিজয় একাত্তর হলে সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুস (কুমিল্লা), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখি (কুমিল্লা) ও সাধারণ সম্পাদক সানজিদা ইয়াসমিন (কক্সবাজার)।
সিলেট বিভাগ থেকে এসেছেন জগন্নাথ হলের সভাপতি কাজল দাস (হবিগঞ্জ) এবং রাজশাহী থেকে এসেছেন রোকেয়া হলের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসেন (বগুড়া)।
হল ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আঞ্চলিকতার প্রাধান্যের বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যারা সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, যারা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত ছিলেন তাদেরকেই নেতৃত্বে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি।
তিনি আরও বলেন, অনেক বিষয় সমন্বয় করতে হয়, আমরা সে চেষ্টা করেছি। সবসময় হয়ত সবগুলো বিষয় পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তবে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল।
এইচআর/আরএইচ