ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুটি হল থেকে ‘মুসলিম’ এবং একটি হল থেকে ‘জিয়াউর রহমান’ শব্দ বাদ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল শাখার কমিটি ঘোষণা করে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ চিত্র দেখা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের স্বাক্ষর ছিল।

এতে দেখা যায়, সলিমুল্লাহ মুসলিমের হলের জায়গায় সলিমুল্লাহ হল এবং ফজলুল হক মুসলিম হলের জায়গায় ফজলুল হক হল লেখা। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা হল লেখা হয়। 

হলগুলোর নামফলক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে মুসলিম এবং জিয়াউর রহমান রয়েছে। এর আগে ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ 'জিয়া' শব্দটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানালেও তা করেনি প্রশাসন।

এদিকে শব্দ দুইটি বাদ দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, পরিকল্পিতভাবে এই শব্দগুলো বাদ দিয়েছে ছাত্রলীগ। কেউ বলছেন, নিজেদের অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল সংগঠন প্রমাণ করতেই মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো হল নেই বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

রাকিবুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ছাত্রলীগের স্বাক্ষরিত প্যাডে কেন শুধু সলিমুল্লাহ হল দেওয়া? বাকি হলগুলোর সবগুলোতে হলের সম্পূর্ণ নাম থাকলেও শুধুমাত্র সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের ক্ষেত্রে মুসলিম শব্দটি কেন বাদ দেওয়া? এটা যদি হয় অসাম্প্রদায়িকতা তাহলে ছাত্রলীগের যেসব ভাইয়ের নামের সাথে ইসলাম অথবা মো. যুক্ত রয়েছে তারাও না হয় তাদের নাম থেকে এগুলো বাদ দিয়ে দিক।

তামান্না আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, প্রতিটি হলের নামকে সংক্ষেপে না লিখলেও জিয়া হলকে 'মুক্তিযোদ্ধা হল' নাম দিয়ে কমিটি দিয়েছে। কিন্তু সেই হলটি কোথায়? মুক্তিযোদ্ধা হল নামে তো আমাদের কোনো হল নেই। শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের নামটি মুখে না নিতে হলের নামটিই পাল্টে দিল! কেউ বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনকের স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করে কেউ বা বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত রণাঙ্গনের একজন বীর যোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে চায় না। এই অস্বীকৃতির মনোভাব আর ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে বিকৃত করার অপচেষ্টার শেষ কোথায়?

শরিফুল আলম নামে আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, ছাত্রলীগ কতটা ইসলাম, মুসলিম ও মুক্তিযোদ্ধা বিদ্বেষী এবং কতটা দেশপ্রেম শূন্য সংগঠন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! ছাত্রলীগের হল কমিটি প্রকাশ করতে গিয়ে তারা তাদের অফিসিয়াল প্যাডে তিনটা হলের নাম বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে! 
 
হলের পূর্ণাঙ্গ নাম না লেখা প্রসঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন সামরিক স্বৈরশাসক, তার বিরুদ্ধে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, আদালতের রায়ে ঘোষিত একজন অবৈধ শাসক, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। এমন একজনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলের নাম থাকা আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়। শিক্ষার্থীদেরও এই নামের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। তাই আমরা নামটি পরিবর্তন করেছি। আর নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করায় 'মুসলিম' শব্দটি বাদ পড়েছে। 

অন্য নামগুলোর ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত রূপ আর কিছু নয়। আমার কাছে মনে হয় যারা ধর্মীয় রাজনীতিকে উস্কানি দিতে চায় তারাই এসব প্রশ্ন উত্থাপন করে।

এইচআর/এসকেডি