শাবি উপাচার্যের খাবার লাগলে সরবরাহ করবেন শিক্ষার্থীরা
বাসভবনে অবরুদ্ধ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের খাবার লাগলে তা সরবরাহ করবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষকরা খাবার নিয়ে যেতে চাইলে তারা বাধার মুখে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, উপাচার্যের খাবার লাগলে আমরা খাবার সরবরাহ করব। বাসভবনে পুলিশ ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, আমরা খেয়াল করছি, কিছু শিক্ষক খাবার দেওয়ার নাম করে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের বলতে চাই, যদি কখনো ভেতরে কারও খাবার, পানি বা অন্য যে কোনো জরুরি কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে তার সবকিছু আমরা তাদের দিয়ে আসব।
তিনি আরও বলেন, ভেতরে যদি কেউ অসুস্থও হয় আমাদের জানালে আমরাই তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। যদি হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাব। তবুও পুলিশ সদস্য ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকরা ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাধার মুখে পড়েন। সর্বশেষ প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর খাবার নিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ফিরে যান।
শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে প্রক্টর আলমগীর কবীর বলেন, বাসভবনে উপাচার্যের সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা রয়েছেন। সেখানে গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। পানি ও খাবার সংকট রয়েছে। তারা কষ্ট করছেন। এছাড়া উপাচার্য অসুস্থ, আমরা জানি না তার কী অবস্থা। তার জন্য আমরা ওষুধ নিয়ে যেতে চাই। সেখানে একজন শিক্ষকও অসুস্থ। আমরা তাকে দেখতে যেতে চাই, যেন প্রয়োজনে আমরা তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি।
এর আগে গতকাল (রোববার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিকেল থেকেই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা পুলিশ ছাড়া ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহের রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনায় দুইশ থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- আন্দোলনরত দুইশ-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’
পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই অসুস্থ। এ অবস্থার মধ্যেও কর্মসূচি চালিয়ে যেতে অনড় তারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার (২৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলার মধ্যেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
জুবায়েদুল হক রবিন/আরএআর