শাবি ভিসির অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে খোলা চিঠি
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসির অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালনের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এ খোলা চিঠি পাঠ করেন ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।
বিজ্ঞাপন
খোলা চিঠিতে তারা বলেন, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আজ এক গভীর সঙ্কটময় সময়ে আমরা আপনার কাছে এই খোলা চিঠি প্রেরণ করছি। সিলেটে অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সঙ্কট হঠাৎ করে উদ্ভূত হয়নি। সিরাজুন্নেসা হলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তাদের হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিল। হলে ডাবলিং নিষিদ্ধ করা, ডাইনিং এ খাবারের মান বৃদ্ধি, অভিভাবকদের হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া, গণরুম প্রথা বাতিল করাসহ বিভিন্ন দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ তাদেরকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং খুবই অশোভন ভাবে কথা বলেন।
তারা আরও বলেন, অপমান ও বঞ্চনায় জমতে থাকা ক্ষোভ বিস্ফোরিত হলে এই হলের শিক্ষার্থীরা ১৩ জানুয়ারি রাতেই উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে অবস্থান নেন প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরের দিন, অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি লিখিতভাবে দাবি উত্থাপনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ১৪ জানুয়ারি লিখিত প্রস্তাব নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উপাচার্য তাদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এত কিছুর পরও শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনে সভা করতে যাবেন খবর পেয়ে দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের উপর বর্বর কায়দায় আক্রমণ শুরু করে। হামলায় প্রায় ৩০ জন আহত হন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উপাচার্য তাদেরকে দেখা করবেন বলেও আর দেখা করেননি, উল্টো পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলা করিয়েছেন।
খোলা চিঠিতে বলা হয়, একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। বিশ্ববিদ্যালয় একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবে, আন্দোলন করবে, অবরোধ/ধর্মঘটের মতো কর্মসূচিও তাদের অধিকার। কিন্তু একজন অভিভাবক কখনও তার সন্তানদের উপর টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এর আক্রমণে মদদ দিতে পারেন না। এই ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করতে সাউন্ড গ্রেনেড এবং গুলির ব্যবহার স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। এই হামলার পর উল্টো পুলিশ অজ্ঞাতনামা ২০০ শিক্ষার্থীর নামে কাজে বাধা প্রদান, গুলিবর্ষণ এবং হত্যার উদ্দেশে মারধরের অভিযোগ এনে মামলা করে।
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের নৈতিক অধিকার নেই উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এহেন বর্বর হামলায় মদদ দেওয়ার পর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপাচার্য হিসেবে থাকার আর কোন নৈতিক অধিকার নেই বলে আমরা মনে করি। যে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি না হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ দিয়ে হামলা করান, তার কাছে শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই নিরাপদ নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হওয়ার সব ধরনের যোগ্যতায় তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি এবং কর্মসূচিতে অনড় রয়েছেন। তার অভিভাবকত্ব বরণ করে নেওয়ার চেয়ে মৃত্যুও শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি নিরাপদ।
হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠিতে বলা হয়, এরই মধ্যে অনশনের ১০০ ঘণ্টার বেশি পার হয়েছে। অনশনরতদের অনেকেই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। সমাধান ছাড়া এভাবে চলতে থাকলে যেকোন সময় কোনো শিক্ষার্থী মৃত্যুর কোলে ঢলে পরতে পারেন, এতে এক অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতির আশু সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে আমরা আপনার হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। আমরা প্রত্যাশা করছি, আপনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের দাবিটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবিলম্বে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে তার উপাচার্য পদ থেকে অপসারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। উপাচার্যের অপসারণই এখন পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা ভেঙে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে।
এইচআর/আইএসএইচ