র‍্যাগ ডে বা শিক্ষা সমাপনী দিবস মানেই দিনভর নাচ-গান, আমোদপ্রমোদ, খাওয়া-দাওয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ। সাধারণত স্নাতক শেষে শিক্ষার্থীরা এই আয়োজন করে। দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই রীতি রয়েছে।

কিন্তু এই প্রথা ভেঙে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা। আনন্দ উল্লাসে অর্থ ব্যয় না করে বিভাগের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করেছেন তারা। পাশাপাশি শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্রও বিতরণ করা হয়েছে।

এই উদ্যোগের পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়ক বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. কামরুজ্জামান বাবু। তিনি বলেন, প্রতিবছর শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে র‍্যাগ ডে, গালা ডে, গালা নাইট, ব্যাচ ট্যুরসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে থাকে। আমাদের শিক্ষক ড. আরসাম কুদরত এ খোদার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই চিরাচরিত প্রথা থেকে বেরিয়ে এসেছি। কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলীর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করেছেন, যার জন্য এরকম একটি কাজ সম্পন্ন করতে সচেষ্ট হয়েছি। 

তিনি বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের অর্থ দিয়ে বিভাগের বর্তমান ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষের মোট ২২ জন দরিদ্র ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে এককালীন জনপ্রতি তিন হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করলাম। ইতিমধ্যে অর্থের একাংশ দিয়ে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্রও বিতরণ করেছি।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) কলা ভবনের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ৬১৮ নং কক্ষে এই বৃত্তি প্রদান কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে ঢাবি কলা অনুষদের ডিন ড. আবদুল বাছির, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও একুশে পদক প্রাপ্ত অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ড. সুমন কান্তি বড়ুয়াসহ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় সুকোমল বড়ুয়া বলেন, এখানে দুটি বিষয় সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, নতুন চেতনা ও মৌলিক চিন্তা সৃষ্টি হয়েছে। যা আগামীতে র‍্যাগ ডে না করে মানবিক ও গঠনমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে। এতে শিক্ষার্থীরা তোমাদের ব্যাচকে অনুকরণ করবে। দ্বিতীয়ত, তোমাদের কাজে দায়িত্ববোধের উদাহরণ তৈরি হয়েছে, যা নতুনদের জন্য শিক্ষণীয় হবে।

পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও জাতিকে নতুন বার্তা দিয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি অভিভূত দুটি কারণে। প্রথমত, এই বিভাগের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে মানবিকতার আলো পৌঁছে দিতে পেরেছে। তাদেরকে ধন্যবাদ। দ্বিতীয়ত, এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের দেওয়া মূল্যবোধ ধারণ করতে পেরেছে। সুতরাং, তাদের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তোমরা যে বিন্দু আজকে আঁকলে তা একদিন বৃহৎ বৃত্তাকার ধারণ করবে বলে আমার বিশ্বাস।

এইচকে