পছন্দের প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক দিতে নীতিমালা লঙ্ঘন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৯ এ পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে নিয়মের ব্যত্যয়ের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সব অনুষদে চূড়ান্ত ফলে সিজিপিএ পদ্ধতির ব্যবহার করলেও কলা অনুষদের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম মানা হয়েছে।
জানা যায়, কলা অনুষদে একই সিজিপিএধারী দুই শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ অনুষদে সিজিপিএকে চূড়ান্ত ফল না ধরে সব বিষয়ের নম্বরের যোগফল ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রেও বঞ্চিত শিক্ষার্থী এগিয়ে থাকেন, কিন্তু পুনরায় ভগ্নাংশ পদ্ধতিতে ফল যোগ করে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক দেওয়ার নীতিমালা অনুযায়ী ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ১০ শতাংশ (শতকরা ১০ নম্বর) যুক্ত করে স্নাতক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলের ৯০ শতাংশ (শতকরা ৯০ নম্বর) যোগ করে মনোনয়ন দিতে হইবে’ উল্লেখ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক মনোনয়নের বিষয়টি দেখভাল করে ইউজিসির রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন ডিভিশন। এ বিভাগের পরিচালক মো. কামাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, কোনো অনুষদের একাধিক শিক্ষর্থীর স্নাতকের সিজিপিএ সমান হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরে যে এগিয়ে থাকবে তাকে মনোনয়ন দেবে।
তিনি আরও বলেন, ইউজিসিতে যে সিলেকশন হয় তা একেবারে নিরপেক্ষভাবে হয়। কেউ যদি তথ্য গোপন রেখে আমাদের কাছে তালিকা পাঠায়, তা জানার পর আমরা পুনরায় যাচাই করি।
এই নীতিমালা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার দফতর থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর ও সংশ্লিষ্ট ডিন অফিসে শিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে ছয় অনুষদ থেকে সর্বমোট ৭ জনের নাম পাঠানো হয়। কলা অনুষদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দুজনের সিজিপিএ প্রাপ্ত নম্বর একই হওয়ায় সেখান থেকে দুজনের নাম পাঠানো হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের জন্য ৫টি অনুষদের ডিন অফিস থেকে ফল পাঠানো হলেও কলা অনুষদে এ ‘তথ্য নেই’ জানায়। কিন্তু অনলাইনে ওই সেশনের ভর্তি পরীক্ষার ফল আছে। সেই ফল থেকে জানা যায়, কলা অনুষদ থেকে সর্বোচ্চ সিজিপিএধারী একজন ভর্তি পরীক্ষার ৬৭.২৫ নম্বর পেয়ে ২১৫৬ সিরিয়াল ও অন্যজন ৬৭.০০ নম্বর পেয়ে ২২৬০ সিরিয়ালে থেকে ভর্তি হন।
নীতিমালা অনুযায়ী, চূড়ান্ত ফলের ৯০ শতাংশ নম্বরের সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ১০ শতাংশ যোগ করা হলে বঞ্চিত শিক্ষার্থী এগিয়ে থাকেন।
এ নিয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন বঞ্চিত শিক্ষার্থী। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সভা সূত্রে জানা যায়, দুজনের একই ফল নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় উভয়ের সিজিপিএ নম্বর, টিজিপিএ, সব বর্ষের ফলের যোগফল ও সর্বশেষ ভগ্নাংশ প্রক্রিয়ায় তাদের ফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
মনোনয়নবঞ্চিত ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দুজনের সিজিপিএ প্রাপ্ত নম্বর একই। তবে ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরসহ যোগ করলে আমার নম্বর বেশি। নীতিমালা অনুযায়ী এই পদকের জন্য আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা।
তিনি আরও বলেন, সিজিপিএ, টিজিপিএ-কে টিসিপি দিয়ে ভাগ করলে ও প্রকাশিত রেজাল্টের পূর্ণাঙ্গ নম্বর দিয়ে বিবেচনা করলেও আমি এগিয়ে থাকি। কমিটির সদস্যরা সব পদ্ধতিতে চেক করে দেখেছেন।
কিন্তু পরবর্তীকালে তারা আমাদের প্রকাশিত ফলের নম্বর বাদ দিয়ে নম্বরের ভগ্নাংশ দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। আমি এখানে পিছিয়ে থাকায় তারা এটাকেই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হিসেবে নিয়েছেন। সবার ক্ষেত্রে এক নিয়ম থাকলেও আমার ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম ও একাধিক ক্রাইটেরিয়া দিয়ে দেখা হয়েছে। আমি যেটাতে পিছিয়ে তারা সেটাই গ্রহণ করেছেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক একেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ফল হয় সিজিপিএ’র ভিত্তিতে। আমার কাছে অনুষদের সর্বোচ্চ ফলাফলধারীর নাম ও ফল চাওয়া হয়েছে। আমি সেই তথ্য পাঠিয়েছি। কলা অনুষদ থেকে দুজনের সিজিপিএ সমান হওয়ায় আমি দুজনের নামই পাঠিয়েছিলাম। পরে এটা নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আমাদের একটি সভা হয়। সভার মতামতের ভিত্তিতে আমরা এ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, সভায় আমি সিজিপিএ’র কথা উত্থাপন করেছি। বাকি অনুষদে যেহেতু সিজিপিএ’র ভিত্তিতে করা হয়েছে, এক্ষেত্রেও আমি তাই বলেছি। তবে সভায় বাকিদের সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত এসেছে।
ট্রেজারার ড. কামালউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা নীতিমালা নিয়ে সবাই বসেছি। দুই অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ অন্যরা ছিলেন। নীতিমালা মেনেই সবাই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
এমটি/এসএম