২০২০ সাল। প্রাণঘাতী করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ছিল পুরো দেশ। এই মহামারিতেই দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বের বিয়োগ ঘটেছে। সেই করোনাভীতিকে সঙ্গী করেই শেষ হতে চলেছে আরও একটি বছর, ২০২১ সাল। বিদায়ী এ বছরেও করোনাসহ নানা রোগে ভুগে অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

দুরারোগ্য ব্যাধি, করোনাভাইরাস ও বার্ধক্যজনিত কারণে ২০২১ সালে প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২৯ জন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক। যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।

এসব শিক্ষকের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ জন। তাদের মধ্যে চারজন বর্তমান শিক্ষক এবং বাকি পাঁচজন অবসরপ্রাপ্ত। এছাড়া ১৫ জন শিক্ষক মারা গেছেন বার্ধক্যজনিত কারণে। অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা গেছেন আরও ৫ জন শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন- উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. নাজমা চৌধুরী, দর্শন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আবদুল মতীন, খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম খান, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হাসান।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সালেহীন কাদরী, সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ড. ফয়েজুন্নেছা বেগম, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক কে এম মোহসীন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. গালিব আহসান খান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জামাল খান। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মাহবুব আহসান খান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. সেকুল ইসলাম, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা। ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যান নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশীদ মাহমুদ। 

বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এ. এম. হারুন-অর-রশীদ, অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, অধ্যাপক ড. এম এ এম মুহতাশাম হোসেন; অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী রশিদ, অধ্যাপক ড. আইয়ুবুর রহমান ভূঁইয়া; বাংলার অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক আহমদ কবির; সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. রাবেয়া খাতুন; লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ; শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আবু হামিদ লতিফ; গণিতের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন; ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল মালেক; ইতিহাসের অধ্যাপক ড. এ বি এম মাহমুদ এবং ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক কাশীনাথ রায়।

এসব গুণীদের প্রয়াণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ। তাদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। একইসঙ্গে সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন।

প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গেলাম রব্বানী। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রয়াত শিক্ষকগণ স্ব-স্ব বিভাগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। তাদের চলে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বড় শূন্যতা তৈরি হলো। বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। আমরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

এইচআর/এইচকে