তারা ছিলেন জাতির দিশারি। মুক্তিকামী জনতাকে নিজেদের মেধা ও মনন দিয়ে গড়ে তুলছিলেন ধাপে ধাপে। সবাই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক। পাকিস্তানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্বদেশী শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও ঐতিহ্য নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দৃঢ় চিত্তে। এই বিপ্লবী ভূমিকার কারণে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন তারা।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে ২৫ মার্চ কালো রাতে এবং ১৪ ডিসেম্বর জাতির এই মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে হানাদার বাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রাণ হারিয়েছেন ঢাবির ১৮ জন শিক্ষক।

তারা হলেন- ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আবুল খায়ের, সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, বাংলা বিভাগের আনোয়ার পাশা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, এএন মুনীর চৌধুরী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মো. সাদত আলী, সিরাজুল হক খান, ড. ফয়জুল মহী, গণিত বিভাগের শরাফত আলী, ইংরেজি বিভাগের শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ভূতত্ত্ব বিভাগের আব্দুল মুকতাদির, দর্শন বিভাগের গোবিন্দ্র চন্দ্র দেব, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের ড. ফজলুর রহমান খান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এ. আর. খান খাদিম ও পরিসংখ্যান বিভাগের ড. এ. এন. এম. মনিরুজ্জামান।

প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ সাদেক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের ডা. মোহাম্মদ মোর্তুজা।

শহীদ শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই জাতি গঠনে নানাভাবে অবদান রেখেছে। তবে এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো মুক্তিযুদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষকরা মুক্তির সংগ্রামে জীবন দিয়েছেন।

সাবেক উপাচার্য ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা সবাই ছিলেন মুক্তমনের মানুষ। তারা প্রগতিশীল আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। তাদের আদর্শকে নতুনদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শহীদ শিক্ষকরা ছিলেন জাতির দিশারি। তারা ক্লাসের মধ্যে নিয়মিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভুলত্রুটি তুলে ধরতেন। ছাত্রদের স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য গড়ে তুলতেন। তাই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের বেছে বেছে হত্যা করেছে।

এইচআর/ওএফ