ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের হল সম্মেলন হতে যাচ্ছে পাঁচ বছর পর। সংগঠনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৮ নভেম্বর সম্মেলন শুরু হবে। এর মাধ্যমে ঢাবির ১৮টি হলে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়া হবে। ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পর সম্মেলনের ঘোষণা আসায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। হলে হলে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সাংগঠনিকভাবে নিজেদের তৈরি করতে পদপ্রত্যাশীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সম্মেলন ও নতুন কমিটি দেওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। হল সম্মেলনের প্রস্তুতি, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমজাদ হোসেন হৃদয়।

ঢাকা পোস্ট : গত ৩০ অক্টোবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আপনারা জানিয়েছেন, ২৮ নভেম্বর হল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন হচ্ছে কি?

সাদ্দাম হোসেন : করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটি বন্ধ ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যে হল সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছি। সম্মেলনের প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে।

নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন হবে। সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে আমরা শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানাব। আমরা চাই, এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণের উৎসবে মুখরিত হোক, নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত থাকুক, সঙ্গে ক্যাম্পাসও প্রাণবন্ত থাকুক।

ঢাকা পোস্ট : সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে কী কী থাকছে? কোনো স্লোগান বা ট্যাগলাইন নির্ধারণ করা হয়েছে কি?

সাদ্দাম হোসেন : স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ছাত্রলীগের ভূমিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও সংকটের বিষয়গুলো মাথায় রেখে এবারের সম্মেলনে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করা হবে। আগামীতে কোন কোন বিষয়ের ওপর ফোকাস করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে, সেগুলোও উল্লেখ থাকবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অতুলনীয় অগ্রযাত্রা, তার নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্মের যে একতা— সেই সুরকে প্রতিধ্বনিত করে আমরা একটি স্লোগান নির্ধারণের চেষ্টা করব।

ঢাকা পোস্ট : সম্মেলন ঘিরে কোনো প্রস্তুতি সভা কিংবা কমিটি গঠন করা হয়েছে কি?

সাদ্দাম হোসেন : সম্মেলন নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির প্রস্তুতি সভা ও বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে কাজ চলছে। এর বাইরেও মঞ্চসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়া, কীভাবে সম্মেলন হবে— সেসব নির্ধারণে আমরা পরিকল্পনা করছি।

ঢাকা পোস্ট : হল সম্মেলনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি হিসেবে থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। তিনি কি সম্মতি দিয়েছেন?

সাদ্দাম হোসেন : বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছি। আমরা যখন শতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য, বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা আশা করছি তিনি থাকবেন। তিনি সম্মেলনে থাকলে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারও অনুপ্রাণিত হবে।

ঢাকা পোস্ট : এবারের সম্মেলনে নতুনত্ব কিছু থাকছে কি না?

 সাদ্দাম হোসেন : সম্মেলনে নতুনত্ব তো অবশ্যই থাকবে। করোনা পরিস্থিতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সম্মেলন অবশ্যই বর্ণিল হবে, সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে। এর বাইরেও আমাদের পলিটিক্যাল মোটো (রাজনৈতিক লক্ষ্য) থাকবে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং তাদের অধিকার আদায় নিয়ে আলোচনাই হবে সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য। এসব বিষয় নির্ধারণ হচ্ছে। আমরা মনে করি, সম্মেলনের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে নতুনত্ব আসবে।

ঢাকা পোস্ট : সম্মেলনে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে?

সাদ্দাম হোসেন : যেহেতু দীর্ঘ সময় পর কমিটিগুলো হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায়। দীর্ঘ সময় ধরে যারা নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করেছেন, সংগঠনের সঙ্গে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে রয়েছেন, আত্মত্যাগ করেছেন, আদর্শিকভাবে আপসহীন লড়াই-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়— তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চাই।

অপরাধী, অনুপ্রবেশকারী, সুনাম ক্ষুণ্নকারী, নেতিবাচক রেকর্ডধারীরা যেন কোনোভাবেই নেতৃত্বে না আসতে পারে, তা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আবারও স্পষ্ট করে বলতে চাই, অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিতে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ঢাকা পোস্ট : সম্মেলনের কতদিনের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে?

সাদ্দাম হোসেন : সম্মেলনের দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো নেতৃত্ব বাছাই, অন্যটি হলো আদর্শিকভাবে উদ্বুদ্ধ হওয়া। কমিটি গঠনের প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আশা করি, সম্মেলনের সঙ্গে সঙ্গেই কমিটি গঠন করতে পারব।

ঢাকা পোস্ট : গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেহেতু আপনারা (বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি) মেয়াদোত্তীর্ণ, সেক্ষেত্রে হল কমিটি গঠনে কোনো জটিলতা হবে কি না?

সাদ্দাম হোসেন : কোনো জটিলতা হবে না। করোনার কারণে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আমাদের গঠনতন্ত্র যেমন রয়েছে, তেমনি ছাত্র রাজনীতিতে ঐতিহ্যও রয়েছে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগঠনগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে।

ঢাকা পোস্ট : পদপ্রত্যাশীদের জন্য বিশেষ কোনো বার্তা বা আপনাদের কোনো প্রত্যাশা...

সাদ্দাম হোসেন : ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি আবর্তিত হয়। আমরা মনে করি, আমাদের কর্মী যারা রয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই পদে আসার যোগ্য। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা কমিটি গঠন করব।

হল সম্মেলন যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে, কর্মীরা যেন সুশৃঙ্খল থাকেন এবং আদর্শিক বন্ধনে তারা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকেন— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ঢাকা পোস্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সাদ্দাম হোসেন : ঢাকা পোস্টকেও ধন্যবাদ

এইচআর/আরএইচ/এমএআর/ওএফ