সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপ, প্রতিমা, মন্দিরে হামলা-ভাংচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়ার নেতৃত্বে  ৯ জন শিক্ষক প্রতিনিধি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সহিংসতার কারণ ও আক্রমণের তীব্রতা উপলব্ধির উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গত ১৮ অক্টোবর কুমিল্লা ও চৌমুহনীতে হামলার শিকার পূজামণ্ডপ, মন্দির, আশ্রম, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এবং আক্রান্ত পরিবার, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চৌমুহনীতে বিজয়া দশমীর দিন এ ধরনের ঘটনার আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মন্দির, আশ্রম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে হয়তো এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যেত। হামলা শুরুর পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন সক্রিয় হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত বলে এলাকাবাসী মনে করেন। স্থানীয় প্রশাসনে সমন্বয়হীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অনৈক্যের সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা নির্বিঘ্নে এ হীন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, যে মুহূর্তে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে, সে মুহূর্তে ষড়যন্ত্রকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে তৎপর রয়েছে। এই একই অপশক্তি আগে কক্সবাজারের রামু, সুনামগঞ্জের সাল্লা ও বগুড়ায় গুজব সৃষ্টি করে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। এই অপশক্তির উদ্দেশ্য জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করা।

এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাজ ও অস্থিতিশীলতার পুনরাবৃত্তি রোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি চারটি দাবির কথা উল্লেখ করেছে। সেগুলো হলো:

১। আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট স্থানে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার এবং হামলার সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তা তদন্ত করা। এক্ষেত্রে কারো কোনো অবহেলা বা শিথিলতা থাকলে তা চিহ্নিত করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

২। হামলার ঘটনায় নিহতদের পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত পূজামণ্ডপ, আশ্রম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

৩। এ ধরনের ঘটনাগুলো রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বিধায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা করা। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হামলার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

৪। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে যেকোনো সহিংসতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি যেকোনো অপতৎপরতা রোধে সর্বাত্মক আইনের সতর্কতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া।

এইচআর/জেডএস