জিডিপির ২ শতাংশ বাজেট দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব না
‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০’ বাস্তবায়িত হলে বিজ্ঞান শিক্ষা মারাত্মক সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। শিক্ষাখাতে জিডিপির ২ শতাংশ বাজেট দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০ : কোন পথে শিক্ষাব্যবস্থা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
সংগঠনের সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক কথা সাহিত্যিক রাখাল রাহা, ঝিগাতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসহাক সরকার, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু, শহীদুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শামীম জামান।
অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে উচ্চতর গণিত বাদ দেওয়া হলো। বিজ্ঞানের ৩টা বই মিলে একটা বই হলো। এটা বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকুচিত করবে। ভবিষ্যতে যারা বিজ্ঞান পড়তে চাইবে তারা মারাত্মক সংকটে পড়বে। মূল কথা হলো সবাই সবকিছু পড়বে এভাবে একটা এভারেজ জাতি তৈরি হবে। কোনো বিজ্ঞানী তৈরি হবে না। বিজ্ঞান না পড়িয়ে ‘জীবন ও জীবিকা’ পড়াবে সবাইকে। অর্থাৎ শুরু থেকেই বিজ্ঞানী, গবেষক নয়- জীবিকার কথা ভাবানো হচ্ছে। সবমিলে এটি জাতিকে ধ্বংস করার রূপরেখা।
ঢাবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, এই শিক্ষাক্রম বাস্তবে প্রয়োগ অসম্ভব। সরকার এটা করছে কেন? সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিক্ষার মান নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে, র্যাংকিং হচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে। তাতে সরকার চাপে পড়ে কিছু করে দেখাতে চাইছে, বাহবা নিতে চাইছে সম্ভবত। কিন্তু এজন্য তারা সময় নিয়েছে মাত্র দুই বছর। এই সময়ে পাঠ্যপুস্তক তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে এটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। এজন্য পর্যাপ্ত বাজেটের প্রয়োজন। শিক্ষাক্রমে এ বিষয়ে কোনো কথা নেই।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাক্রমে ইংরেজি শিক্ষার নম্বর ও ক্লাসের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলা মাধ্যমে যারা পড়বে তাদের ইংরেজির ভিত আরও দুর্বল হবে। ইংলিশ ভার্সন, ইংলিশ মিডিয়ামের দিকে অনেকেই ঝুঁকবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অ্যাটেনডেন্স ও মাসিক পরীক্ষার ভিত্তিতে নম্বর দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি শিক্ষকের হাতে নয়। এটা দেশের বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সভাপতির বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন নিঃসন্দেহে একটি উন্নত প্রক্রিয়া। কিন্তু স্থান, কাল বিবেচনায় না নিলে উন্নত প্রক্রিয়াও সব সময় ভালো ফল দেয় না। এজন্য পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক আমাদের নেই। শিক্ষকদের একটি অংশও নানা কারণে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে শিক্ষকরা ছাত্রদের জোড় করে নিজের কাছে পড়া বা কোচিংয়ে পড়তে বলবেন। যারা পড়বে তারাই বেশি নম্বর পাবে।
শুধু তাই নয়, এতে স্বজন পোষণের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। পরপর তিনটি পাবলিক পরীক্ষা ছাত্রদের জন্য হবে চাপের। সবকিছু বিবেচনায় এই শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলেও জানান তিনি।
এইচআর/এমএইচএস