পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহাদী অপুর মরদেহ।

মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ময়নাতদন্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটির স্বরূপকাঠির উদ্দেশে রওনা হয়।

জানাজায় উপস্থিত বন্ধু-সহপাঠীদের অনেককে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়, কেউ বা কান্নার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। তারা বলছেন, এমন মেধাবী, মিশুক, পরিশ্রমী একজন মানুষ এভাবে আত্মহত্যা করতে পারে না। তবে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউই।

সহপাঠীরা জানান, অপু অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। অনার্স ও মাস্টার্সে ভালো রেজাল্ট করা অপু কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেন। চাকরি ছেড়ে গত দুই বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিসিএসের। ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

অপুর সঙ্গে ক্যাম্পাসে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন অনিক রয়। সে স্মৃতিচারণ করে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে আন্দোলন-সংগ্রামের মিছিলের মাধ্যমে অপুর সঙ্গে পরিচয়। সে সরাসরি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। আমরা এমন একটি সিস্টেম তৈরি করছি, যাতে অপুর মতো সাহসী ছেলেগুলো হারিয়ে যেতে বাধ্য হবে। অপু যে লড়াইটা করেছে, আমরা অপুর সহযোদ্ধা হিসেবে অবশ্যই লড়াইটা এগিয়ে নিয়ে যাব। অপু ভালো থাকুক এটাই আমাদের কামনা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মঈন উদ্দিন বলেন, ওর মুখে তো হাসি ছাড়া কিছু দেখিনি, মেধাবী একটা ছেলে। তবে প্রথম বর্ষের দিকে আত্মহত্যার একটা চেষ্টা করেছে বলে আমি শুনেছিলাম। পরে অবশ্য এটা আলোচনায় আসেনি এবং তাকে আর এমন মনেও হয়নি। এখন আসলে জানিনা তার কী হয়েছে।

ইশতিয়াক নামে অপুর এক বন্ধু বলেন, অপু আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট ছিল। আমরা ফাঁকিবাজি করলেও, সে করতো না। ওর যে মেধা, প্রজ্ঞা সেটি আর আমাদের সমাজ-দেশের কাজে লাগলো না। ন্যায্য দাবির পক্ষে ক্যাম্পাসে সামনে থেকে আন্দোলন করতো সে। কখনো ভাবিনি সে নিজেকে এভাবে শেষ করে দেবে, আমরা সবাই খুবই শোকাহত। আমাদের দায় রয়েছে, আমরা তার বয়স জানলে, কথা বললে হয়ত ফিরিয়ে আনতে পারতাম।  

এর আগে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর চানখারপুলের স্বপ্ন বিল্ডিংয়ের ৮ম তলার একটি কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে চকবাজার থানা পুলিশ।

এইচআর/এসএম