নেই ছাত্র সংসদ, বন্ধ চিকিৎসাকেন্দ্র, তবুও ফি আদায়
প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা অথবা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকা কলেজে নেই আবাসিক চিকিৎসক। বন্ধ রয়েছে চিকিৎসাকেন্দ্রটিও। দীর্ঘদিন ধরে নেই ছাত্র সংসদের কোনো অস্তিত্ব। তবুও এসবের ফি আদায় করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঢাকা কলেজের চিকিৎসাকেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে চিকিৎসাকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, এর মূল গেট তালাবদ্ধ। কক্ষের সামনে টেবিল, বেঞ্চ স্তূপ করে রাখা হয়েছে৷ স্যাঁতসেঁতে অবস্থা-ই বলে দিচ্ছে দীর্ঘদিনেও পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া লাগেনি। চিকিৎসা বাবদ ২০ টাকা হারে ফি আদায় করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, গত ২৭ বছর ধরে নেই ঢাকা কলেজ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। জানা যায়, সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৩-৯৪ সালে। বর্তমানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ২৫ টাকা হারে ছাত্র সংসদ ফি নেওয়া হচ্ছে।
বেহাল অবস্থা কলেজের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদেরও। চাক্ষুষ কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ৫০ টাকা হারে সাহিত্য ও সংস্কৃতি ফি আদায় করা হচ্ছে৷
সম্প্রতি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের সই করা নির্দেশনায় স্নাতক ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত বেতন ৩০০ টাকা, বিএনসিসি ফি ৪০ টাকা, রোভার স্কাউট ফি ১৬ টাকা, রেড ক্রিসেন্ট ফি ২০ টাকা, ছাত্র সংসদ ফি ২৫ টাকা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ ফি ৫০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ৩০ টাকা, মসজিদ তহবিল ফি ৫০ টাকা, ক্রীড়া ফি ৯০ টাকা, দরিদ্র তহবিল ফি ২০ টাকা, চিকিৎসা ফি ২০ টাকা, পরিবহণ ফি ৫০০ টাকা, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ফি ৮৫০ টাকা, লাইব্রেরি ফি ২৫ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ফি ৩০ টাকা, অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী ফি এক হাজার টাকা, বিবিধ ২০ টাকা, বিজ্ঞান ক্লাব ২০ টাকা, আইসিটি ২০ টাকাসহ মোট তিন হাজার ২০৬ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ সেবা না দিয়েও এক প্রকার জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব ফি আদায় করছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। বিভিন্ন খাতে পরিষেবা নিশ্চিত না করেও নেওয়া হচ্ছে ফি। প্রায় দেড় বছর ধরে পরিবহনে যাতায়াত করেও শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে পরিবহন ফি। তাই বর্ধিত এসব ফি মওকুফের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কলেজের স্নাতক ২০১৬-১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, করোনার কারণে এমনিতে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়৷ এরপর এসব অতিরিক্ত ফি আদায় অযৌক্তিক। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে ফি মওকুফ করছে। আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষেরও উচিত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এসব ফি মওকুফ করা।
কলেজের আরেক শিক্ষার্থী শাফেয়ী সালেহী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নেই। এমনকি ছাত্র সংসদের কক্ষও নেই। তাহলে কেন আমরা অতিরিক্ত ফি বহন করব। ঢাকা কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক চিকিৎসক নেই। নেই কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রও। কিন্তু তারপরও বছর বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করা হচ্ছে। আমরা এসব ফি মওকুফ করার দাবি জানাই৷
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ছাত্র সংসদের ফি ওই তহবিলেই রয়েছে। ওখান থেকে এক টাকাও খরচ হয়নি। আর সরকার তো ফি আদায় করতে নিষেধ করেনি৷
কলেজের চিকিৎসাকেন্দ্র পুনরায় চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কতদিন ধরে চিকিৎসাকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ, তা আমার জানা নাই৷ আমরা এটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারিভাবে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য আমরা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছি। চেষ্টা করছি দ্রুত একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার জন্য।
আরএইচটি/আরএইচ