অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার শর্তে ৫ অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হল খোলার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় এ সুপারিশ করা হয়। এদিকে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় শতভাগ প্রস্তুতিও শেষ করেছে হল কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সব হলের ৯০ ভাগ কাজ শেষ। শুধুমাত্র কিছু দেয়ালে রং করা এবং শেষ মুহূর্তের ধোঁয়া-মোছার কাজ চলছে।

প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের হল প্রায় শতভাগ প্রস্তুত। এখন ফাইনাল ধোঁয়া-মোছা, চেয়ার টেবিল ঠিক করা এসব কাজ চলছে।

শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন বলেন, আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু রং করা বাকি। সেটাও দুই একদিনের মধ্যে হয়ে যাবে।

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে আমরা ব্যাপক সংস্কারের কাজ করছি। রিডিং রুম, ডাইনিং রুম, ক্যান্টিন, ওয়াশরুমসহ শিক্ষার্থীদের কমন ফ্যাসিলিটিগুলো শতভাগ প্রস্তুত করতে আমরা চেষ্টা করেছি। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধির জন্য হল গেটে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করাসহ ব্যাপক কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিছু রং করার কাজ বাকি তাও আজ কালের মধ্যে আশা করছি হয়ে যাবে।

এদিকে গতকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় ৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সুপারিশ করা হলেও শিক্ষার্থীরা পহেলা অক্টোবর হল খোলার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, হলগুলো যেহেতু শতভাগ প্রস্তুত, পহেলা অক্টোবর হল না খোলাটা তাদের জন্য হয়রানির।

ডাকসুর সাবেক সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জীবন বাস্তবতায়, জীবিকার তাড়নায় যেসকল শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে না থেকে, ঢাকায় বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে প্রতিদিন টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা কী পারবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেসে ফ্রি থাকতে? অক্টোবরের ৫ তারিখে মেস বা বাসা ছাড়তে গেলে মেস মালিক বা বাসার মালিক কী তাকে ছাড় দেবে? আমাদের প্রশাসন ৫ তারিখের পরিবর্তে ১ অক্টোবর থেকে হলে থাকার ব্যবস্থা চাইলেই করতে পারতেন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে অক্টোবরে ১ তারিখ থেকে হল খুলে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

মাহমুদুল হাসান নামে মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী বলেন, ১ তারিখ হল খুললে বিশ্ববিদ্যালয়ের কী এমন ক্ষতি হতো! যার জন্য হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ভোগান্তি পোহাতে হবে। এটা মোটেও শিক্ষার্থী বান্ধব সিদ্ধান্ত নয়। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই না। পহেলা অক্টোবর হল খুলতে হবে এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সুপারিশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ক্ষোভ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শোয়ায়েব আহমেদ নিলয় নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘পাঁচ দিনের জন্য পুরো মাসের মেস ভাড়া দিতে হবে অনেক শিক্ষার্থীর। ক্যাম্পাসের আশপাশের মেস থেকে কী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো শেয়ার পায়? সব ছাত্র সংগঠন দাবি জানানো সত্ত্বেও তারা এ রকম অবিবেচক সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়?’

আমানুল্লাহ পারভেজ লিখেছেন, ‘প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী। আর কত সহ্য করা যায়? সেপ্টেম্বরে হল খুলে দিবে এই আশায় অনেকে মেসের সিট কেটে দিয়েছে। অথচ কয়েক দিন আগে গুঞ্জন উঠল, সেপ্টেম্বরে হল খুলবে। সময় এসেছে হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করার।’

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীকে অবহিত করলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পরিবেশ পরিষদের যে প্রস্তাবনা ছিল, আমরা সেগুলো মাথায় রেখেই কাজটা করেছি। সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ গ্রন্থাগার, সেমিনার, রিডিং রুম খুলে দেওয়া হবে। হল খুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও আমাদের ছিল। কিন্তু ১ ও ২ তারিখ আমাদের ভর্তি পরীক্ষা আছে। এটা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এজন্য আমরা ৫ অক্টোবর খোলার সুপারিশ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি বিবেকবান। তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার গভীরতা আছে। আশা করি তারা বিষয়টি বুঝবেন।

এইচআর/এমএইচএস