সশরীরে পরীক্ষা দিয়েও ফলে আসে ‘অনুপস্থিত’। সব বর্ষের সব পরীক্ষায় পাসের পরও হয় না পূর্ণাঙ্গ ফল। দুই বিষয়ে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে করতে হয় তিন বিষয়ে ফেল। তাছাড়া বিভিন্ন বর্ষে দেখা যায় গণহারে ফেল। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের পরীক্ষার ফলে এমন অসংগতি প্রায়শই দেখা যায়। কোনোভাবেই এসব সমস্যা পিছু ছাড়ছে না। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সমস্যা সমাধানে স্ব স্ব কলেজ প্রশাসন থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ প্রশাসনের দায়িত্বহীনতায় ভোগান্তি বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বড় ভোগান্তি সশরীরে পরীক্ষা দিয়েও ফলে অনুপস্থিত আসা অথবা সিজিপিএ না আসা। এ সমস্যা সমাধানে কলেজ প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয় না। উল্টো শিক্ষার্থীদেরই নিজ থেকে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে হাজিরা শিট তুলে দরখাস্ত লিখে তাতে আবার নিজ কলেজের অধ্যক্ষের সই নিয়ে জমা দিতে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে। যদিও এখানে সম্পূর্ণ দায়ভার কলেজ প্রশাসনের। পরীক্ষা দেওয়ার পরও প্রশাসনের গাফিলতি আর সমন্বয়হীনতার ফলেই শিক্ষার্থীদের এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

সম্প্রতি এমন সমস্যায় পড়েছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার। তিনি বলেন, আমি পেটে আট মাসের বাচ্চা নিয়ে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছি। এরপরও ফলে এক বিষয়ে W (উইথেল্ড-পরীক্ষার ফলে অনুপস্থিত লেখা) এসেছে। 

তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে এক মাসের বাচ্চা নিয়ে আমার কেন্দ্র কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে হাজিরা শিট সংগ্রহ করে নিজ কলেজের অধ্যক্ষের সইসহ আবেদনপত্র ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে জমা দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই বিষয়ে পরে ফেল আসে। এ বছর আবার মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছি ওই বিষয়সহ মোট দুই বিষয়ে। কিন্তু ফল এসেছে তিন বিষয়ে। এরমধ্যে এক বিষয়ে আবারও W (উইথেল্ড) এসেছে। এরকম হয়রানির কোনো মানেই হয় না।

সব বর্ষে সব পরীক্ষা দিয়েও ফল না আসায় হতাশ বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক শিক্ষার্থী সানজিদা আঞ্জুম। তিনি বলেন, আমার কোনো বর্ষে কোনো বিষয়েই ফেল নেই। কোনো বর্ষে কোনো মানোন্নয়ন পরীক্ষায়ও অংশ নিইনি। অথচ সব বর্ষে পাস থাকার পরও ফল ইনকমপ্লিট (অসম্পূর্ণ) দেখাচ্ছে। এখন আবার ফল সমন্বয় করার জন্য ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে যেতে হবে। কোনো বর্ষে ফেল না করেও এমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমাদের, যা খুবই হতাশাজনক।

গত ২ সেপ্টেম্বর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের বাংলা বিভাগের ফল প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলে ছয় কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের সিজিপিএ এলেও সিজিপিএ আসেনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলা বিভাগের কোনো শিক্ষার্থীর।

কেন এমন সমস্যা হলো জানতে চাইলে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাবেয়া খাতুন বলেন, এ বিষয়ে আমি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুনেছি। শিক্ষার্থীদের আমি আবেদন করতে বলেছি। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্র কলেজ অধ্যক্ষের সুপারিশসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর পাঠাব।

একটি বর্ষের নির্দিষ্ট বিভাগের সব শিক্ষার্থীর সিজিপিএ না আসার মত ঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষের কোনো দায়ভার রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবির বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ নির্ধারণ করে। এখানে আমার কোনো দায়ভার নেই। কারিগরি সমস্যার কারণে এমনটি হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আবেদনের পাশাপাশি কলেজ প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। তবে তিনি কল রিসিভ না করে কেটে দেন। 

ফলে অসংগতির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি বারবার কেন হচ্ছে- তা জানতে সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আগে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

আরএইচটি/আরএইচ