জবির ৫৪১ কোটি টাকা গেল কই, জবাব চান ছাত্রনেতারা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের জন্য জমি ক্রয়ে অনিয়ম, প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে দুর্নীতি ও তিন দফা প্রকল্পের বারবার মেয়াদ বৃদ্ধির করায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো এসবের প্রতিবাদ জানিয়েছে। এরই মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ, তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্ট। এ ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে ছাত্র সংগঠনের নেতারা। অন্যথায় অতীতের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেবে সংগঠনগুলো।
ছাত্র ইউনিয়নের জবি নেতারা বলেন, জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরে ২০১৮ সালে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু এখানে কাজের অগ্রগতি নেই, চলেছে হরিলুট। ৫০০ কোটি টাকার হিসাবে গোঁজামিল।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, এখনও জমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি। জমি অধিগ্রহণে মালিকদের সঙ্গে চরম অন্যায় করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় আমরা প্রকল্পের মান নিয়ে সন্দিহান। যে ৫০০ কোটি টাকার হিসাব প্রশাসন লুকাতে চাইছে তা স্পষ্ট করতে হবে এবং দ্রুত নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২০১৬ সালের হল আন্দোলনের মতো মাঠে নেমে আসতে বাধ্য হবে।
জবি ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, নতুন ক্যাম্পাসের দুর্নীতি, অনিয়মের তদন্ত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন জানান নেতারা। এ সময় তারা স্লোগান দেন, ৫৪১ কোটি টাকা গেল কই? বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা কার পকেটে? আমাদের টাকা গেল কই?
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নেতারা বলেন, গত পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে একনেক সভায় ‘জবির নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন শীর্ষ প্রকল্প’ যে বাজেট দেওয়া হয় সেই বাজেটে প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসন ১০ বছরেও ছাত্রী হল হস্তান্তর করতে পারেনি, উল্টো জবির উন্নয়নের কাজে অবকাঠামো নির্মাণে ৫৪১ কোটি টাকার গড়মিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই শুভঙ্করের ফাঁকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সংকটের মুখোমুখি ফেলবে। প্রশাসনের লুটেরা ব্যবস্থার মধ্যে এ সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এই ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে হবে। যে বিশাল অঙ্কের টাকার গড়মিল পাওয়া গেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। নয়তো অতীতের মতো প্রশাসনকে ছাত্র সমাজের আন্দোলনের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।
জানা যায়, ২৮ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস ঘিরে দুর্নীতি অনিয়ম ও ৫৪১ কোটি টাকা গড়মিল নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, ২০১৬ সালের আগস্টে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারের জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নির্মাণের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কেরানীগঞ্জে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস নির্মাণের ঘোষণা দেন।
এরপর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু ১৮৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করতে পেরেছে। এ কাজটিও শেষ হয়নি, অধিগ্রহণ করতে হবে ২০০ একর জমি। মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি, নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের মাস্টারপ্ল্যানের কাজ নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দেওয়ার পাঁয়তারায় বড় ধরনের অনিয়ম এবং সর্বশেষ করোনাকালীন সংকটে কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ৮৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নতুন ক্যাম্পাসের জন্য ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১৪৪১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে এর মধ্যে ৫৪১ কোটি টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে, তা জানাতে পারেননি প্রকল্প কর্মকর্তারা।
এদিকে, রোববার ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জবি ছাত্রলীগ।
এমটি/ওএফ