ছাত্রলীগের জন্য কাজ করে ঢাবির কাছে টাকা দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কক্ষ ব্যবহার করে অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম চালাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ কার্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে ডাকসুর কর্মচারীদের।
নির্দিষ্ট কার্য-সময়ের বাইরে ছাত্রলীগের জন্য অতিরিক্ত সময় (ওভারটাইম) কাজ করায়, পাওনা চাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ওভারটাইমকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর অনুমোদন দেয়নি।
বিজ্ঞাপন
বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৮ আগস্ট করোনা রোগীদের জন্য সারা দেশে বিনামূল্যে ‘বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা’ চালু করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ডাকসুর কক্ষ ব্যবহার করে এ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংগঠনটি। অতিরিক্ত সময় (ওভারটাইম) কাজ করে এর দেখভাল করছেন ডাকসুর কর্মচারীরা।
ছাত্রলীগের এ অক্সিজেন সেবার দায়িত্বে রয়েছেন, সাহিত্য সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সহ-সভাপতি তিলত্তমা শিকদার, সহ-সভাপতি, খাদিজাতুল কুবরা, সহ-সভাপতি, জিয়াসমিন শান্তা যুগ্ম-সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি, সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন প্রমুখ।
নাম প্ৰকাশে অনিচ্ছুক ডাকসুর একাধিক কর্মচারী জানান, ছাত্রলীগের বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা কার্যক্রমের শুরু থেকেই তারা সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এর পারিশ্রমিক তাদের দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের অক্সিজেন সেবার সঙ্গে জড়িত ডাকসুর এ কর্মচারীদের ওভারটাইম পারিশ্রমিকের একটি আবেদন ডাকসুর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আসে। ডাকসুর বর্তমান কমিটির মেয়াদ না থাকা এবং ছাত্রলীগের নামে আসায় পারিশ্রমিকের আবেদনকে ‘অনৈতিক’ উল্লেখ করে অনুমোদন দেননি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।
বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক আসিফ তালুকদার বলেন, সেবা পরিচালনার জন্য ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। শুধুমাত্র সিলিন্ডারগুলো ডাকসুর কক্ষে রাখা হয়েছে। কর্মচারীদের কাজ শুধুমাত্র রুমের তালা খোলা এবং বন্ধ করা। ওভারটাইম পারিশ্রমিকের আবেদন আমরা করিনি, হয়তো অতি উৎসাহী কেউ করছেন। আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।
ডাকসুর কক্ষ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছি। যারা কাজ করছেন, আমরা তাদের পারিশ্রমিক দেব। ডাকসু তো নেই, ডাকসুর পক্ষ থেকে কোনো আবেদন আমরা করিনি। ডাকসু অফিস থেকে করা হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই।
দলীয় কাজে ডাকসুর কক্ষ ব্যবহার করায় ছাত্রলীগের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, আমি শুরু থেকেই বলে আসছি ডাকসুকে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। যেমনটি মধুর ক্যান্টিনকে ব্যবহার করা হয়। অথচ এগুলো সব শিক্ষার্থী এবং ছাত্র সংগঠনের জন্য উন্মুক্ত। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ডাকসুর কোনো কার্যক্রমও নেই। এ সময় ডাকসুকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা কোনোভাবেই মানা যায় না। দলকানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রশ্রয়ে তারা এসব করার সাহস পাচ্ছে, এর দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডাকসু তো এখন নেই। তারা (ছাত্রলীগ) নিজেরা কাজ করবে, কর্মচারী নেবে কেন? নিয়মের বাইরে কিছু হবে না। নিয়মের বাইরে আমি কোনো কিছু অনুমোদন দিতে পারি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তো এটি করতে বলা হয়নি। এর কোনো খরচও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করবে না, তাদের নিজেদের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে ডাকসুর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ দিলেও সাড়া মেলেনি।
এইচআর/আরএইচ