বাঁ থেকে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস ও গোলাম সাব্বির সাত্তার

শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। এরপর তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে শূন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদটি। রাবির পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা মহলে আলোচনা। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে তিনজন সিনিয়র প্রফেসরে নাম প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিললে চলতি মাসেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো তালিকার প্রথমেই আছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর হাবিবুর রহমান, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক গোলাম সাব্বির সাত্তার। এ তিন শিক্ষকই আওয়ামী পন্থী। তাদের ব্যাপারে সরকারের একাধিক সংস্থা খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছে। প্রস্তাবে যে তিনজনের নাম পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

তালিকায় নাম থাকা অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ১৯৯০ সালে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেড-১ ক্যাটাগরির অধ্যাপক। তিনি ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিজ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুই দফায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাচনে তিনি আহ্বায়ক পদে জয় লাভ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান আওয়ামী রাজনীতি সঙ্গে জড়িত। তার পিতা ডা. ইয়াসিন আলী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি ১৯৭৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। সর্বশেষ তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

তালিকায় নাম থাকা আরেক শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি বর্তমানে পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজ বিভাগের সভাপতি হন। এছাড়া তিনি তিনবার প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার পারিবারিকভাবে আওয়ামী রাজনীতি সঙ্গে জড়িত। তার পিতা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।

তালিকায় একমাত্র নারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস সমাজকর্ম বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক। তিনি স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য, সিন্ডিকেট সদস্য, নিজ বিভাগের সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষ, সহকারী প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে সিকদার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তবে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব শেষ না করেই তিনি অব্যাহতি নেন। তিনিও পারিবারিকভাবে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

রাবির উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপাচার্য নিয়োগের প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। কবে নাগাদ নিয়োগ দেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারের সর্বোচ্চ মহলের ব্যাপার।  

সাধারণত, উপাচার্য নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তিন সদস্যের একটি তালিকা পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ওই ফাইল রাষ্ট্রপতির দফতরে যায়। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি তিনজন থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। চলতি মাসেই রাবিতে উপাচার্য নিয়োগ হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

উল্লেখ্য, গত ৬ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ কার্যদিবসে একসঙ্গে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এই নিয়োগকে অবৈধ উল্লেখ করে সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  ৮ মে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ক্যাম্পাসে এসে বর্তমান উপাচার্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত), সাবেক উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও নিয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরবর্তীতে এ নিয়োগ স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এনএম/এসকেডি