ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবি

বাকি টাকা চাওয়ায় ঝালমুড়ি বিক্রেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের নেতা রবিউল ইসলাম রবির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এ ঘটনা ঘটে।

রবি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী। ভুক্তভোগী ব্যক্তি টিএসসি, কলাভাবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। সবার কাছে তিনি ‘ভান্ডারি মামা’ নামে পরিচিত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের এই নেতা টিএসসির জনতা ব্যাংক শাখার সামনে একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতার শার্টের কলার ধরে মারধরের উপক্রম করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আশপাশের বেশ কয়েকজন এ সময় তাকে থামানোর চেষ্টা করে তার পরিচয় জানতে চান। তখন তিনি নিজের নাম না বলে ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিচয় দিয়ে বলেন, এটা অন্যদের দেখার বিষয় নয়।

বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে রবি আবার উত্তেজিত হয়ে যান। আগের পাওনা টাকার প্রসঙ্গ তুলে কেন তাকে দোষ দেওয়া হচ্ছে এ কথা বলে তিনি ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় আশপাশ থেকে উৎসুক আরও কিছু মানুষ এগিয়ে এলে রবি মারধর করা বন্ধ করেন।

এ সময় ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতা দাবি করেন, রবি নামে ছাত্রলীগের এই নেতা আগেও বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে ঝালমুড়ি কিনে টাকা দেননি। টাকা চাওয়ায় সে আমাকে মারধর করেছে। আমার কোনো অপরাধ নেই।

ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে টিএসসি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে টাকা আদায় করার এবং বিভিন্ন হলের ক্যান্টিন ও ভ্রাম্যমাণ দোকানে ফ্রিতে খাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম রবি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) উনার কাছে ঝালমুড়ি চাইলে আমাকে দাঁড় করে রেখে অন্যদের ঝালমুড়ি দিচ্ছিল। আমার পরে যারা আসছে তাদেরও দিচ্ছিল কিন্তু আমাকে দিচ্ছিল না। অনেকক্ষণ ধৈর্য ধরে ছিলাম, পরে একটু রেগে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আমাকে অন্য ব্লেম দিতে থাকলে আমি উনাকে ধাক্কা দেই। তবে পরে আমি উনাকে সরি বলেছি।

পাওনা টাকার বিষয়ে অভিযোগ করে রবি বলেন, উনি আমার কাছে কোনো টাকা পেতেন না, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। তবুও আমি তাকে পঞ্চাশ টাকা দিয়েছি। এতগুলো মানুষের সামনে আমাকে ব্লেম দেওয়ায় সামান্য ধাক্কা দিয়েছি আর কিছুই না। ঘটনাটির জন্য আমি অনুতপ্ত।

হলের ক্যান্টিনে ফ্রি খাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমার বিরুদ্ধে বড় একটি নিউজ করে দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রবি মুহসীন হলের ক্যান্টিন এবং হলের ভেতরের দোকানেও বাকি খেয়ে পরে টাকা দেন না। ক্যান্টিন মালিক আলমগীরের সঙ্গে কয়েকবার বাকবিতণ্ডাও হয়েছে তার। হলের অনেক শিক্ষার্থীই জানে এসব। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়ায় সে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জেনেছি। এটি খুবই দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং গর্হিত। এ ধরনের আচরণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি আমরা খতিয়ে দেখব।

এইচআর/এসএসএইচ