চাঁদা চেয়ে মারধর, ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এক কর্মচারীর কাছে চাঁদা দাবি ও তাকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার আকতারুল করিম রুবেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের উপ-দফতর সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী।
সোমবার (২৬ জুলাই) দুপুরে ভুক্তভোগী মো. মনির হোসেন বাদী হয়ে মামলা করলে তাকে গ্রেফতার দেখায় শাহবাগ থানা পুলিশ। এর আগে, সকাল ৯টার দিকে ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে রুবেল ও তার সঙ্গীরা তাকে মারধর করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার এজাহারে মো. মনির হোসেন অভিযোগ করেন, সকালে আমি ও আমার সহকর্মী মো. সোহেল ও হারুন নাস্তার জন্য হাসপাতাল থেকে হোটেলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হই। জরুরি বিভাগের সামনে পৌঁছালে আকতারুল করিম রুবেল ও তার সহযোগীরা আমার গতিরোধ করে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রুবেল ও তারা সঙ্গীরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কাঠ ও রড দিয়ে আমার হাত, পা, মাথা ও ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সজোরে আঘাত করেন। এছাড়াও কিল, ঘুষি ও লাথি দিয়ে মারাত্মক জখম করেন। আমার সহকর্মীরা এগিয়ে গেলে তাদেরও কাঠ ও রড দিয়ে পিটিয়ে আঘাত করে।
গ্রেফতারের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আকতারুল করিম রুবেল নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী মনির হোসেন চাঁদা দাবি ও হামলার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জানতে পেরেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী (আকতারুল করিম রুবেল) অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজি ও মারধরের ঘটনায় আটক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, আকতারুল করিম রুবেল একজন ছিনতাইকারী ও মাদকবিক্রেতা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রাজা নামেও তিনি পরিচিত। নিজেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হল ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে থাকেন। আকতারের সঙ্গে জিয়া হলের ড্রপআউট শিক্ষার্থী ও তার বন্ধু ইশতিয়াক আহমেদ ইমনসহ আরও সাত থেকে আটজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিদিন ছিনতাই ও মাদক বিক্রি করে থাকেন৷
আরও জানা যায়, আকতার বর্তমানে উদ্যানের মাদক বিক্রেতা নেটওয়ার্কের প্রধান। উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘরের পাশে অবস্থিত গ্লাস টাওয়ারের নিচে সাধারণত তিনি অবস্থান করেন। তিনি উদ্যানে চারটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন।
আকতারের গ্রেফতারের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগে কোনো অপরাধীর প্রশ্রয় নেই। মাদক ও চাঁদাবাজির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেব। তার (আকতারুল করিম রুবেল) গ্রেফতার এবং অভিযোগের বিষয়গুলো জেনেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, আমরা ইতিমধ্যে অনুরোধ করছি এবং সহায়তা করছি। এর বাইরে আমাদের ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাংগঠনিকভাবে যে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, তা আমরা করব।
এইচআর/আরএইচ