সশরীরে পরীক্ষা, বিপাকে ঢাবি শিক্ষার্থীরা
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এ সময়ে সেশনজট রোধে অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে গেলেও পরীক্ষা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে কয়েকবার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত আর সম্ভব হয়নি।
সবশেষ করোনাকালে আবাসিক হল খোলা হবে না- এমন শর্তে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘোষণা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগ সশরীরে পরীক্ষাও নিয়েছে। তবে হঠাৎ করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি, বিভিন্ন জেলায় চলমান লকডাউন এবং সোমবার থেকে সারাদেশে লকডাউনের সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষা ৪ জুলাই এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ৩ জুলাই থেকে শুরুর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্ত স্থগিত চান শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষা স্থগিত করে সুবিধামতো সময়ে যেন পরীক্ষাটি নেওয়া হয় সে অনুরোধ জানান তারা।
বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আদিল মাহবুব বলেন, আমাদের জন্য এ সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ অমানবিক। শিক্ষার্থীদের মতামতকে তোয়াক্কা না করে এক তরফা একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি সিদ্ধান্ত। আমাদের দাবি, অবশ্যই এই পরীক্ষা স্থগিত করতে হবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা নিতে হবে।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা ঢাকার বাইরে অবস্থান করছি, তাদের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া করোনার মধ্যে হঠাৎ ঢাকায় এসে আবাসন নিশ্চিত করা আরও বড় ঝামেলার। আশা করি প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেবে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন। আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যানকে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে, স্যারও গ্রহণ করেছেন। তবে এখনও শিওর না। পরীক্ষা স্থগিত হওয়াই আমাদের জন্য উত্তম।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশই তো অচল হয়ে যাচ্ছে, পরীক্ষা কীভাবে হবে। পরীক্ষার সিদ্ধান্ত তো আমরা নিইনি, নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে আমরা বসব। এমনিতে বোঝাই যাচ্ছে, এ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে তো পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছি। শনিবার (২৬ জুন) বিকেলে কিংবা রোববার অফিসিয়ালি আমরা পরীক্ষা আপাতত স্থগিতের ঘোষণা দেব।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি তো ভয়াবহ, সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে বিভাগগুলো। শিক্ষার্থীরা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আমরাও বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলব।
সশরীরে পরীক্ষার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অনলাইন কিংবা সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে, লকডাউন থাকলে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এইচআর/এসএসএইচ/জেএস