ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় রাখা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার জন্য বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়।

ঢাবির বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে চিকিৎসা ব্যয় বাবদ বরাদ্দ প্রায় ছয়গুণ বাড়ানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫০ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এছাড়া, আলাদাভাবে করোনা মোকাবিলায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন কোটি টাকা। এর মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন সুবিধা বাবদ এক কোটি, কোভিড-১৯ এর টেস্টিং বাবদ এক কোটি এবং কোভিড-১৯ চিকিৎসা বাবদ এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের (মেডিকেল সেন্টার) জন্য বরাদ্দ ছিল সাত কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দেখানো হয় ছয় কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে চিকিৎসাকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ছয় কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, মহামারির এ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দিকটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের মান খুবই নিম্ন। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য-অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাবির মেডিকেল সেন্টারের সক্ষমতা অনুযায়ী করোনার জন্য এ বরাদ্দ কমও নয়। তবে মেডিকেলের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা এখানে নেই। মেডিকেল সেন্টারে আরও বরাদ্দ দিয়ে সক্ষমতা বাড়ানো উচিত।

এই বাজেট পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ ঢাবির প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান মুত্তাফী বলেন, যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি, সেখানে করোনার জন্য এ তিন কোটি টাকায় কিছু হবে না। কয়েকটি অক্সিজেন জেনারেটর ও নতুন এক্সরে মেশিন কেনা এবং কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা- সবমিলে এ তিন কোটি টাকা পর্যাপ্ত নয়। ঢাবির মেডিকেল সেন্টারে জনবল বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন হলে ঢাবির চিকিৎসাকেন্দ্র আলাদা মাত্রা পাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিশাল একটি খরচের খাত তৈরি হবে। এটিকে আমলে নিতে ইউজিসিকে জানালেও তারা কোনো প্রণোদনা দেয়নি। তবুও আমরা এই খাতকে গুরুত্ব দিয়েছি। ইউজিসি থেকে প্রণোদনা পেলে আমরা আরও বেশি বরাদ্দ দিতে পারতাম।

তিনি বলেন,  আমরা এর আগে দুটি ল্যাব স্থাপন করেছিলাম সেখানেও ইউজিসি অনুদান দেয়নি। কিন্তু আমাদের করোনা মোকাবিলা করতে হবে, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরাতে হবে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাই আমরা শুধুমাত্র করোনার জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বেড়েছে। অথচ ইউজিসি অনুদান কমিয়ে দিয়েছে। বাজেটে ৭০ কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি। এ ঘাটতি পূরণ করাও আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য। সরকার, ইউজিসি থেকে আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কোভিড-১৯ কে সামনে রেখে আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে যথাযথ বাজেট প্রণয়ন করার চেষ্টা করেছি।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। সভায় এ বাজেট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।

এবারের বাজেটে ২৬৪ কোটি টাকা শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন, ২২৪ কোটি টাকা ভাতা, পণ্য ও সেবায় খাতে ১৬৮ কোটি টাকা, পেনশন বাবদ ১২২ কোটি টাকা, গবেষণা-মঞ্জুরি হিসেবে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ৬৯৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৮৩ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে আসবে ৬৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এইচআর/আরএইচ