কমেছে ঢাবির বাজেটের আকার, বেড়েছে গবেষণা বরাদ্দ
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পাস করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাজেট পেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এর আগে ২১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এ বাজেট অনুমোদন দেয়।
বিজ্ঞাপন
সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাকসুদ কামালসহ সিনেট, সিন্ডিকেট, নির্বাচিত রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এবারের বাজেটে ২৬৪ কোটি টাকা শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন, ২২৪ কোটি টাকা ভাতা, পণ্য ও সেবায় খাতে ১৬৮ কোটি টাকা, পেনশন বাবদ ১২২ কোটি টাকা, গবেষণামঞ্জুরি ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (বিমক) অনুদান ৬৯৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৮৩ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে আসবে ৬৫ কোটি টাকা। প্রতিবারে মতো এবারও এই অর্থ বছরের বাজেটের আয়ের উৎস বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ও নিজস্ব আয় হলেও ঘাটতি থাকে ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতবারের তুলনায় এবার বাজেটের আকার কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ছিল ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩১ কোটিতে।
বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ হয়েছে বেতন-ভাতা খাতে। শুধু বেতন-ভাতা খাতেই খরচ হবে ৪৮৯ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। যা বাজেটের ৫৮.৮১ শতাংশ। অন্যদিকে গবেষণায় বরাদ্দ বেড়েছে। এতে রাখা হয়েছে ১১ কোটি টাকা। যা বাজেটের ১.৩২ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ কোটি ৫০ লাখ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ৯ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে গবেষণায় ব্যয় বাড়ানো ছাড়াও গবেষণাগারের সরঞ্জামাদির জন্য ৬ কোটি ৫ লাখ টাকা, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ে ৫ কোটি টাকা, বিভাগীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ২ কোটি টাকা, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য আড়াই কোটি টাকা ও শিক্ষকদের গবেষণা ভাতা ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অধিবেশনে অভিভাষণ দেন সভার সভাপতি ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলেও অনলাইন ও অফলাইনের সমন্বয় আনার মাধ্যমে যাবতীয় শিক্ষাকার্যক্রম সচল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস এবং অনলাইনে/সশরীরে বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দীর্ঘসময়ের সেশনজটের ঝুঁকি রুখতে পেরেছে। এ মুহূর্তে ৫-৬ মাসের সেশন জট থাকলেও একাডেমিক কাউন্সিল প্রণীত 'ক্ষতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা (Loss Recovery Plan) অনুসরণ করলে তার নিরসন ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার অবস্থান নির্ণয়ের একটি শক্তিশালী সূচক হলো মৌলিক গবেষণা। মূলত টিচিং-লার্নিংয়ের পাশাপাশি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মৌলিক কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কার্যক্রমের উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে সরকার এক বিশেষ গবেষণা বরাদ্দ দিয়েছে। এর আওতায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৌলিক গ্রন্থ ও জার্নাল প্রকাশনা এবং গবেষণা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে করোনা একটি দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাহস, ধৈর্য ও সঠিক পরিকল্পনায় সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
বাজেট উপস্থাপনের সময় লিখিত বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের নিজস্ব আয় খুবই কম বিধায় বাজেট প্রণয়নে অনেকাংশে নির্ভর করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (বিমক) অনুদানের ওপর। ২০২০-২১ সালের মূল বাজেটে বিমক’র নিয়মিত অনুদান ছিল ৭৪৮.০৬ কোটি টাকা যা পরে সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ৬৬৬.৭৬ কোটি টাকা। চলমান মহামারির কারণে আমরা এ বছরে অনেক কাজ শুরু/সম্পন্ন করতে পারিনি বিধায় মূল বাজেটে দেওয়া টাকা খরচ হয়নি। তাই সংশোধিত বাজেটে ৮১.৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ১০.৮৭ শতাংশ বাজেট কমানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং শিক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম আরম্ভ করব। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং মেডিকেল সেন্টারে আইসোলেশন সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে। ফলে অনেক নতুন খরচের খাত আগামী বছরে উদ্ভব হবে। আমাদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিমক এ খাতে কোনো বরাদ্দ দেয়নি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারি না, সেজন্য অনুদান না পেয়েও উপাচার্যের নির্দেশনা মতে বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এইচআর/এসএম