অধ্যাপক ড. এ এ মামুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন সবগুলো হলের কাজ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এ মামুন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিস্থিতি নেই। তবে সবগুলো হল নির্মাণের কাজ শেষ হলে আমরাও দাবি করব যাতে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়।

শনিবার (২৯ মে) ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন এ এ মামুন। কারণ হিসেবে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ আবাসিক হওয়াতে ছাত্র-ছাত্রীদের গণরুমে থাকতে হয়। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে আমি এর বিপক্ষে। আমি কখনোই চাইব না আমার ছেলেমেয়েরা এই পরিস্থিতিতে গণরুমে থাকুক। তাই হলগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে তবেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি তুলব।

এরপরই হলের কাজের সার্বিক অগ্রগতি জানতে মুঠোফোনে কথা হয় হল নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। কবে নাগাদ হলগুলোর কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে হলগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর প্রশাসন কবে কীভাবে শিক্ষার্থীদের হলে তুলবে সেটা তাদের বিষয়। তবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির আগে শিক্ষার্থী উঠানোর মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব না বলেও যুক্ত করেন তিনি।

এদিকে শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ জন শিক্ষক সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান। তবে এ দাবিকে সরকার বিরোধী অংশের দাবি বলে আখ্যা দেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, যারা দাবি তুলেছে তারা অংশে খুবই ছোট। বৃহৎ অংশ চায় না বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা চালু হোক।

যারা বিবৃতি দিয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি জানিয়েছে তারা অধিকাংশই সরকার বিরোধী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। এদের বড় একটি অংশ একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে উপস্থিত থেকেও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জোরালো বিরোধিতা করেনি। তারা তো চাইলেই ওই বৈঠক থেকে বের হয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারত। কিন্তু সেটা না করে রাতে বিজ্ঞপ্তি দিল।

তবে বিবৃতিদাতা শিক্ষকদের একজন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একাডেমিক কাউন্সিল থেকে বের হয়ে গেলে তো তারা এককভাবে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতো সেটা কী ভালো হতো? আমরা সভায় থেকে আমাদের কথা তুলে ধরেছি। তারা যদি সত্যিকার অর্থে মনে করেন যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা স্বাস্থ্যবান্ধব সিদ্ধান্ত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি দিন শত শত মানুষ আসা যাওয়া করছে, হাজারো শ্রমিক কাজ করছে তারা কী মানুষ না? আমরা মনে করি খুব দ্রুত সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা দরকার। কিন্ত এমন যদি হয় আমরা শুধু অনলাইনে ক্লাস নিব কিন্তু সশরীরে ক্লাস শুরু করার পদক্ষেপ নিব না তবে এমন সিদ্ধান্তের আমরা বিরোধীতা করি।

এদিকে শুক্রবার (২৮ মে) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এবং নিজ নিজ একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া যাবে বলে বলা হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির শিক্ষক নেতারাও সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে মন্তব্য দিয়েছেন।

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান নির্মাণ কাজ নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে এখনই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পক্ষে না বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ পুরো প্রশাসন বলে মন্তব্য করছেন একাধিক শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুরেই কথা বলছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুন।

এসপি