শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা, না হলে বড় আন্দোলন
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনতিবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে সোমবার (২৪ মে) থেকে দেশব্যাপী আন্দোলন করছে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৫ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি জানিয়েছেন। দাবি মানা না হলে তারা লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আগামীকাল বুধবার (২৬ মে) দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে ক্যাম্পাস খোলার সিদ্ধান্ত না এলে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেবেন তারা। যতক্ষণ পর্যন্ত না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না হচ্ছে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
ঢাবিতে আজ মানববন্ধন আয়োজনকারীদের একজন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিং আছে বলে জানা গেছে। শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে ক্যাম্পাস খুলে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয় সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না এলে বৃহৎ এবং কঠোর আন্দোলনে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই না কোনোভাবেই আর দীর্ঘায়িত হোক আমাদের এই সেশনজট এবং ভবিষ্যৎ সংকট। শিক্ষামন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে যদি আবারও শিক্ষার্থীদের সেশনজটকে দীর্ঘায়িত করার পাঁয়তারা করা হয় তবে তার জবাব হিসেবে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসবে।
ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। অনলাইন ক্লাসের নামে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসনমূলক আচরণ করেছে। অনলাইনে ক্লাস করতে ডিভাইস ও ডাটাপ্যাক দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তারা কথা রাখেনি। শিক্ষামন্ত্রী বারবার বন্ধের তারিখ পেছাচ্ছেন, কিন্তু দীর্ঘ ১৫ মাসেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) মহামারিকালে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারেনি। এটা তাদের চরম ব্যর্থতা। যদি আবারও ছুটি বাড়িয়ে সেশনজট দীর্ঘায়িত করার পাঁয়তারা করা হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে চলমান আন্দোলনের সমন্বয়ক জি কে সাদিক বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে কী সিদ্ধান্ত আসে সেটার অপেক্ষা করছি। যদি সেখান থেকে তারিখ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনতিবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা না আসে, তাহলে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা কী ধরনের আন্দোলন চালাব সেটা সারাদেশের শিক্ষার্থীরা মিলেই ঠিক করব।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে চলমান আন্দোলনের সমন্বয়ক রিপন হোসাইন বলেন, যদি ক্যাম্পাস খোলা বা পরীক্ষার বিষয়ে আগামীকাল ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা আলোচনা করে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চললে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন চলবে না।
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবিলম্বে হল-ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে আজ মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম, পরীক্ষা বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের সেশনজটে পড়েছেন। ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটছে। এই সংকট নিরসনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল ও ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার বিকল্প নেই।
করোনায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনার এ সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রের কোনো অর্জন নেই। পরিকল্পনাহীনভাবে চলছে দেশের শিক্ষা খাত। এখন পর্যন্ত পাঁচবারের অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পরিবর্তন করেছে কিন্তু খুলতে পারেনি এবং কোনো প্রস্তুতির কথাও জানাতে পারেনি। সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এ দেশের শিক্ষা খাত।
এইচআর/এফআর