গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের নির্বাচন হয়, শিক্ষকদের নির্বাচন হয় প্রতি বছর, তাহলে ছাত্রদের নির্বাচন কেন হবে না? ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেন হবে না? রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদের কোনো বিকল্প নেই।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘ছাত্র রাজনীতির সংস্কার: প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসু’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য ও সম্ভাবনা এবং নতুন প্রজন্মের সামনে গণতান্ত্রিক চর্চার কার্যকর পথ খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখা এ সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন।

নুরুল হক নুর বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের কথা বলে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলে। কিন্তু গত ৩৩ বছরে সংসদীয় গণতন্ত্রে নেতৃত্ব নির্বাচন থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা কতটুকু হয়েছে, তা সবারই জানা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকে, তবে জাতীয় নেতৃত্ব কতটা শুদ্ধ হতে পারে? আমরা চাই না, আর আন্দোলন করতে বা রক্ত দিতে হোক। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য তরুণদের রাজনীতিতে আগ্রহী করতে হবে। কারণ রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। ছাত্র সংসদগুলো তরুণ নেতৃত্ব তৈরির অন্যতম নিয়ামক হতে পারে।

ডাকসু নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনা তৈরি হয়েছিল এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডাকসু না হলে আমাদের রাজনীতিতে আসা হতো না। ধারাবাহিকভাবে যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো, তবে প্রগতিশীল ছাত্র গোষ্ঠী তৈরি হতো। আমরা চাই, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দ্রুত হোক। এটি ছাড়া নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, জাকসু ছিল, কিন্তু ১৯৯৩ সালে শিক্ষকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী জাকসু থাকা উচিত। তাহলে জাকসুর সভাপতি হিসেবে আমি কেন জাকসু দেব না?

রাজনীতিতে ছাত্রদের ভূমিকা অপরিহার্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ছাত্র সংসদের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরি হলে জাতীয় রাজনীতি উপকৃত হবে। এটি জাতীয় নির্বাচনের আগেই হওয়া উচিত। এটি গণতন্ত্রের সেফগার্ড হিসেবে কাজ করবে।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি খায়রুল আহসান মারজান বলেন, ছাত্র রাজনীতি সংস্কার করতে হলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে। নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের ছাত্রত্ব বাধ্যতামূলক করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ বলেন, ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিক সংস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি হবে ছাত্র সংসদ ভিত্তিক। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো আদায় করতে সক্ষম হবে। 

এদিকে সংলাপ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান ক্যাম্পাস আসলেও তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করেই চলে যান। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিখ, ই, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক  ইয়াহিয়া জিসান প্রমুখ। 

মেহেরব হোসেন/আরএআর