জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে গত কয়েক মাস ধরে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে ভুয়া পেইজ খুলে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ জামায়াত-শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতার বিরুদ্ধে।

“ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা” নামের একটি ফেসবুক পেইজে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল বাকি “ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা” নামের ওই পেইজটির এডমিনের পরিচয় প্রকাশ করেন।

আব্দুল্লাহিল বাকি প্রকাশিত ফেসবুক পেইজটির এডমিন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর আল হাদী মায়েদের নাম দেখা যায়। এছাড়া আব্দুল গনি নামে আরও একটি আইডি ওই পেইজের এডমিন হিসেবে রয়েছে। তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তবে আব্দুল গনির আইডিতে মাত্র একজন ফ্রেন্ড রয়েছে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে মেম্বার হিসেবে আছে।

পোস্টে আব্দুল্লাহিল বাকি তার উত্থাপিত অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে আইটি এক্সপার্টদের দ্বারা বের করা পেইজটির এডমিন প্যানেলের তথ্যের ছবি শেয়ার করেন। পাশাপাশি পেইজটিতে বিভিন্ন সময় অপপ্রচারের স্ক্রিনশটও শেয়ার করেন।

পেইজটি ঘুরে দেখা যায়, পেইজটিতে কারা কারা এডমিন, তা হাইড করা রয়েছে। পেইজটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা, জামায়াত-শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিভিন্ন পোস্ট রয়েছে। 

পোস্টে আব্দুল্লাহিল বাকি লিখেছেন, “ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা” নামে একটি পেইজ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নানান সময়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার, ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট, কার্টুন, ছবি বিকৃতিসহ নানা কিছু পোস্ট করে আসছে। পেইজটি থেকে কিছুদিন আগে এক উপদেষ্টারও ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপানো হয় দাঁড়ি-টুপি এড করে, কটাক্ষ করে। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেই পোস্ট পেইজটি থেকে সরানো হয়।

কীভাবে এই পেইজের হিডেন এডমিনদের পরিচয় জানা গেল, জানতে চাইলে আব্দুল্লাহিল বাকি বলেন, আমরা একটি আইটি এক্সপার্ট ফার্মের সহযোগিতায় এডমিনদের পরিচয় শনাক্ত করেছি, যারা মেটার ডেটা নিয়ে কাজ করেন। তবে প্রাইভেসি পলিসির কারণে ওই ফার্মের নাম প্রকাশ করতে পারছি না। 

আব্দুল্লাহিল বাকি তার ফেসবুক পোস্টে আরও লেখেন, পেইজটির পেছনে ছাত্রদলের লোকজন কাজ করছে বলে সবাই বলার পরেও ছাত্রদলের লোকজন এটাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু পেইজটি সত্যিই ছাত্রদলের লোকজনই চালায়। এই কাজগুলো আগে করতো নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লোকজন। প্রকৃতি সম্ভবত কোনও শূন্যস্থান রাখে না।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মানুষের নামে বিষোদগার ছড়ানোর মতো ঘৃণ্য কাজের সাথে জড়িতরা ছাত্রদলের পোস্টেড নেতা! অবাক করা বিষয় হলো এই টাইপের আরও কিছু পেইজ আছে। একটার সাথে আরেকটা কানেক্টেড। সময় মতো সবকিছুই সামনে আনা হবে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা তানভীর আল হাদি মায়েদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি মনে করি কেউ আমার ফেক আইডি খুলে এমনটা করতে পারে অথবা এটা এডিট করাও হতে পারে। তবে এর সাথে আমি জড়িত না। 

আব্দুল্লাহিল বাকির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দেখেছি এসবে কোনও কাজ হয় না। আমাকে বাকি ভাই আক্রমণ করে পোস্ট করেছেন, তিনি এটা কেন করেছেন আমি জানি না। ভাইয়ের সাথে আমার কখনও বিরোধ ছিলো না। তাই এটা নিয়ে আইনি ঝামেলায় যেতে চাই না। আমি ভাইয়ের সাথে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া করে নেব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ফেইক পেইজ খুলে অপপ্রচারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।

কেএইচ/টিএম