রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভিন্ন সময়ে র‌্যাগিং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা, হলে সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তাদের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার তাদের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ছাত্রলীগের ১৯ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে অপরাধের ধরণ ও মাত্রাভেদে ৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রত্ব না থাকলে তাদের সনদ বাতিল হবে। এ ছাড়া ৫ জনকে দুই বছর, চারজনকে ১ বছর, দুজনকে ৬ মাস, একজনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, একজনকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১৩ জনের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। 

শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকায় দেখা গেছে, স্থায়ী বহিষ্কৃতদের ৬ জনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার রায় ও ছাত্রলীগ কর্মী মিশকাত হাসান। 

দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ৫ জনকে। তাদের মধ্যে চারজনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তারা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম, নবাব আব্দুল লতিফ হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা, ছাত্রলীগের কর্মী আব্দুল্লাহ আত তাসরিফ ও মুজাহিদ আল হাসান। 

এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত চারজনের তিনজনই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। তারা হলেন- রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরিন আরিয়ানা, মাদার বখশ হলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর পাল ও ছাত্রলীগ কর্মী জারিফা আহনাফ ইলমা। ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী আনিকা আলম ঊষা ও মরিয়ম আক্তার শান্তাকে। 

এদিকে ১৩ শিক্ষার্থীর হলের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা হলেন- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজরীন আহমেদ খান মেধা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশা খাতুন ও নবনীতা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত জাহান পাপড়ি, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক নুর ই জান্নাত কথা, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারিনা জামান মিম, সহ-সম্পাদক লিমা খাতুন, উপ-প্রচার সম্পাদক বাবলি আক্তার, দপ্তর সম্পাদক জাফরিন খান প্রিয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাইতাহ ইসলাম। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, কয়েকটি ধাপে তদন্তে করে আমরা তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথমে বিভাগে বা হলে তদন্ত কমিটি তদন্ত করে শৃঙ্খলা কমিটিকে সুপারিশ করেছে। পরে শৃঙ্খলা কমিটি সেটাকে তদন্ত করে শৃঙ্খলা উপ-কমিটিকে সেটা উপস্থাপন করেছে। তাদের সুপারিশগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অপরাধের ধরন ভেদে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে বড় অংশ একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তবে রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। এখানে মুখ্য বিষয় হচ্ছে অপরাধ। পরবর্তীতে যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনের যে কেউ এমন অপরাধ করলে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। 

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে র‌্যাগিং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা, ষড়যন্ত্র, ইন্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, ভয়ভীতি, হলে সিট বাণিজ্য এবং গণরুমের ছাত্রীদেরকে জোরপূর্বক স্লোগান দিতে বাধ্য করা, হলের কক্ষের তালা ভেঙে কক্ষ দখল, গভীর রাতে ছাত্রীদের ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে মিটিং করা, শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেইল করা, শিক্ষার্থীদের জিনিস চুরি, দুর্ব্যবহার করা, নেশাদ্রব্য সেবন করা, উচ্চস্বরে গান-বাজনা বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো, রাতে নিজ কক্ষে নিয়ে গিয়ে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো, মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে তল্লাশি চালানো, হত্যার হুমকি দেওয়া, শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন ও অত্যাচার ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধের ধরণ ও মাত্রাভেদে তাদেরকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। 

জুবায়ের জিসান/আরএআর