বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) নবনিযুক্ত ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানের নিয়োগ বাতিল চেয়ে ১৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষকরা।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে গ্রাউন্ড ফ্লোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, ইউজিসির তদন্ত রিপোর্ট ও বহু সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী নবনিযুক্ত ট্রেজারার চরমভাবে বিতর্কিত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। ২৬ নভেম্বর অফিস সময়ের পরে রাতের অন্ধকারে সদ্য নিয়োগকৃত ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে আসলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে যোগদানে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।

তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার থাকা অবস্থায় সদ্য নিয়োগকৃত ট্রেজারারের বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সহযোগী হিসেবে বিধি বহির্ভূতভাবে 'বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ' নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, যা ইউজিসির তদন্তে উঠে আসে। বাংলাদেশের অন্যতম বিতর্কিত সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রধান সহযোগী ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগকৃত ট্রেজারার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তার বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বের চাকরির এলপিসি জমা না দিয়ে তথ্য গোপন করে যোগ্যতার বাইরের গ্রেডে বাড়তি বেতন নেওয়ার অভিযোগ আছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কখনই সেনাবাহিনী/আমলাতন্ত্রের পুনর্বাসনকেন্দ্র হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রুচি, সংস্কৃতি ও উদ্দেশের সঙ্গে সেনা এবং আমলাতন্ত্রের ধারণার বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। ফলে এমন নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক খাত ও সার্বিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা, আদর্শ ও মর্যাদার সঙ্গেও এই নিয়োগ সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, ট্রেজারারের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। ২৭ নভেম্বর প্রথম অবস্থান কর্মসূচি পালনসহ একই দিনে শিক্ষকদের স্বাক্ষরসহ (১২৮ জন) প্রতিবাদলিপি সাংবাদিকদের সম্মুখে ব্রিফিং করা হয়। একই দিনে উক্ত ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে তৎকালীন প্রক্টর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরাও গ্রাউন্ড ফ্লোরে মানববন্ধন করে।  অথচ ওই দিন মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন তাকে গাড়ি, ড্রাইভার ও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী বরাদ্দ দেয়।

পরে ১ ডিসেম্বর শিক্ষকরা আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং ট্রেজারার আবু হেনা মোস্তফা কামালকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। ৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক একটি মানববন্ধনের মাধ্যমে উক্ত নিয়োগ বাতিলের দাবি জানায় ও মানববন্ধন শেষে উপাচার্যর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে অবহিত করেন ও উক্ত নিয়োগ বাতিলের জন্য সহযোগিতার অনুরোধ করেন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে শিক্ষকদের স্বাক্ষর পত্রসহ প্রতিবাদলিপি ও আহ্বানপত্র প্রেরণ করা হয়।

৪ ডিসেম্বর শিক্ষকবৃন্দ এই নিয়োগের চলমান কর্মসূচি হিসেবে লাল ব্যাজ ধারণ শুরু করেন এবং তা অব্যাহত রয়েছে। ৫ ডিসেম্বর সব দপ্তরগুলোতে নিয়োগকৃত ট্রেজারারের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রেরণ করা হয়।

আর এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পুনরায় সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্টজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে যাতে করে বিষয়টি অতি দ্রুত সমাধান হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসে।

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আমরা ট্রেজারারের জন্য প্রদত্ত গাড়ি ও বরাদ্দকৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারী ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। আর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ট্রেজারারের নিয়োগ বাতিল করা না হলে কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএমকে