১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ১০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। হাঁটিহাঁটি পা পা করে আজ ২৮ পেরিয়ে ২৯ বছরে পদার্পণ করেছে। এবার জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংগঠনটির স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নির্ভীকতায় পেরিয়ে আটাশ, উনত্রিশে চবিসাস’।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় চাকসুর সামনে থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন শুরু হয়।

আজ সকাল ১০টায় আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চবিসাস সভাপতি মোহাম্মদ আজহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন চবিসাসের যুগ্ম সম্পাদক শাহরিয়াজ মোহাম্মদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আপনারা যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির ওপর সিরিয়াসলি নিউজ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতিবাচক দিকগুলো বেশি বেশি তুলে ধরবেন। পজিটিভ নিউজ কম হলে অসুবিধা নেই। নেতিবাচক নিউজ বেশি হলে আমরা সতর্ক হতে পারব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা যেন পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে পিছিয়ে না পড়ে। আমি দেখতে চাই, আপনারা ইনভেস্টিগেশন জার্নালিজমে ভালো করছেন। আপনারা ক্রিয়েটিভ জার্নালিজমে ভূমিকা রাখেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ক্রিটিক্যাল জার্নালিজম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই ক্রিটিক্যাল জার্নালিজমের মধ্যে জ্ঞানের চর্চা করতে হবে। সাংবাদিকরা শুধু খবর প্রচার করবে না, তারা গবেষণাও করবে। আধুনিক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে মিডিয়া। সাংবাদিকতা জগৎটাকে যদি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সেন্টিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত করতে না পারি তাহলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। ফলে এদের মানুষ তাদের রাষ্ট্রের অধিকার বুঝে পাবে না।

চবিসাস সভাপতি মোহাম্মদ আজহার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল আমাদের নিজেদেরকে ভেঙে নতুন করে গড়ার আন্দোলন। আমরা সংবাদের জন্য আমাদের সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভর ছিলাম। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে আমরা একজন ব্যক্তি একটি মিডিয়ার ভূমিকা পালন করেছি। চবি সাংবাদিক সমিতি একটি মিডিয়ার ভূমিকা পালন করেছে। যে সাংবাদিক সমিতির পেজে শুধু বিবৃতি ছাড়া কিছু যেত না, সেই পেজ প্রতিদিন লাইভ করে চট্টগ্রামের খবর সারা বাংলাদেশের নিকট পৌঁছে দিয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সদস্যরা কাজ করেছে।

অনুষ্ঠানে চবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নিপু, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোরশেদুল ইসলাম, চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, চবি ছাত্র উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন বক্তব্য দেন। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি নাহিদুল ইসলাম, শাখা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এতে বক্তব্য দেন।

আলোচনা সভায় ‘বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যেমন সংস্কার চাই’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল হক। এ ছাড়া একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলি আর রাজী ‘বিপ্লব-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারের সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শিরোনামে আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আতিকুর রহমান/এমজেইউ