ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে ফের র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। র‍্যাগিং চলাকালে অভিযুক্ত ৫ শিক্ষার্থীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার (১৯ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়। 

পুলিশ হেফাজতে থাকা শিক্ষার্থীরা হলেন- ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া এবং ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া।

জানা যায়, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভুক্তভোগীদের লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে ডাকেন অভিযুক্ত শেহান। ভুক্তভোগী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর এবং মামুন ৩৩০ নম্বর কক্ষে যান। একপর্যায়ে চারজনকে রেখে (শামীম, সাইম, রাকিবুল, হামজা) বাকিদের অ্যাসাইনমেন্ট লেখা লাগবে বলে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর চারজনের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয়। 

এ সময় ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা হয়, আরেকজনকে কল দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনে নাচতে বলা হয়। এ সময় হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না উপস্থিত হয়ে তাদেরকে হাতেনাতে ধরেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করেন। 

এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে নবীন ব্যাচের ১২জন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্তরা৷ পরে তাদেরকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পর্ন সিনেমার তারকাদের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। কাউকে পর্ন তারকা সেজে অভিনয়ও করতে বলা হয়। এছাড়া তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো হয় এবং নানারকম হুমকিও দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া এবং জিহাদ।  

হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না বলেন, আমার কাছে অভিযোগ আসে হলের ৩৩০ নম্বর রুমে র‍্যাগিং চলছে। অতঃপর আমি সেখানে গিয়ে দেখি, সাব্বির এবং সঞ্চয় দুজন মিলে ওদেরকে র‍্যাগ দিচ্ছে। পরে ঘটনা জিজ্ঞাসা করলে তারা অস্বীকার করে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তখন ভুক্তভোগীরা র‍্যাগিং চলছিল এটা নিশ্চিত করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

অভিযুক্ত শরীফ শেহান বলেন, আমি হলের কক্ষে ছিলাম না। পরে আমাকে ডাকা হয়। এ সময় ভেতরে গিয়ে বান্না ভাইকে দেখতে পাই। এর আগে গত দিন মেসে জুনিয়রদের সাথে আমরা বসেছিলাম। ওইদিন ভিসি, প্রক্টর স্যারের নামসহ, বিভাগের সকল শিক্ষকের নাম  জিজ্ঞাসা করা হয়। এ সময় কেউ না পারলে তাকে একটু ধমকও দেওয়া হয়। তবে এ সময় কাউকে মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। তবে বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছুটা সত্যতা রয়েছে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে মিয়া খলিফা আমার আরেক বন্ধুকে মিলে পর্ন ভিডিও বানানোর অঙ্গভঙ্গি করতে বলে। এ ছাড়া আরেক বন্ধুকে বান্ধবী ভেবে ইম্প্রেস করতে বলে। তারা সমকামিতা প্রমোট করতেছে বলে মনে হয়েছে। আমরা তাদের শাস্তির দাবি জানাই।

লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের থানায় নিরাপদে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সুপারিশ করা হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র-উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসেছি। বৈঠক শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

ইবি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, পাঁচজনকে থানায় সোর্পদ করা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে থানায় পুলিশি হেফাজতে নিরাপদে রাখা হয়েছে।  এখনও তাদেরকে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেব।

রাকিব হোসেন/আরএআর