নাহিদ, শিক্ষা সচিব ও ১২ ছাত্র প্রতিনিধিদের বৈঠক
দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীকে দেওয়ার আশ্বাস, সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরসহ ৫ দফা দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি করেছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ চার ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর শিক্ষা উপদেষ্টার সহকারী ও উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পর ১২ জন প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষকদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন তারা।
সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাস থেকে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রথমে শিক্ষা ভবন পরে সচিবালয়ের গেটে অবস্থান নেন।
বিজ্ঞাপন
মিটিংয়ের প্রথমেই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দল থেকে আব্দুর রাকিব বলেন, আমাদের হল নেই। থাকার জায়গা নেই। তাই দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে হল না করে আগে পুকুর হচ্ছে, লেক হচ্ছে। দুর্নীতি আর লুটপাট চলছে। ক্যাম্পাসে রড থেকে শুরু করে সবকিছু চুরি হচ্ছে। আমাদের দাবি বর্তমানে ক্যাম্পাস যে পর্যায়ে আছে, ঠিকাদারের কাজ অনুসারে টাকা দিয়ে বাকি কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হোক।
এ সময় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও জবি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দীন বলেন, আমাদের ছেলেদের আন্দোলনটি যৌক্তিক। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ফ্যাসিবাদী সরকারের লোকেরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আমরা আশ্বাসের পর্যায়ে থাকতে চাই না। আমরা চাই ছেলেদের হলসহ দ্রুত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ যেন শেষ করা হোক।
এরপর শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের কাছে ক্যাম্পাসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ গত মঙ্গলবার একনেক মিটিংয়ে বাকি জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি অনুমোদন হয়েছে। তবে সেখানে কাজের অগ্রগতি কম। শিক্ষার্থীরা চায় সেনাবাহিনীকে কাজ দিলে দ্রুত শেষ করা যাবে। এটা ভালো কথা। কিন্তু এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখে জানাতে হবে যে, আমরা সেনাবাহিনীকে দিয়ে কাজ করাতে চাই। তাহলে সরাসরি সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো যাবে। এটা ভালো প্রস্তাব। আমি খারাপ দেখি না। কারণ এটা তো ক্যাম্পাসের কাজ করানোর জন্য ভালো পদ্ধতি। তবে যে প্রক্রিয়া আছে, সেটা অনুসরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন
এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল ইসলাম বলেন, যে ঠিকাদার কাজ এতদিন ধরে সঠিক সময়ে করতে পারলো না, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে কি না। এর উত্তরে শিক্ষা সচিব বলেন, কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়। যদি এই সময়ে পিডিকে সুনির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে ঠিকাদার কাজ শেষ না করে তাহলে জরিমানা করার সুযোগ আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ভাবছে, জানতে চাইলে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, আমরা বিগত সরকারের সময় প্রশাসনের দায়িত্বে না থাকলেও ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ফেসবুকে নানা লেখালেখি করেছি। আমরাও চাই কাজ দ্রুত হোক। একনেকে প্রজেক্টের মেয়াদ বৃদ্ধি হলেও আমরা আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। এরপর পিইসি কমিটির মিটিং করে সেনাবাহিনীকে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় ছিল। কিন্তু আমরা জানি না প্রসেসটা কী। সেনাবাহিনীকে কাজ দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেভাবে গাইডলাইন দেবে আমরা সেভাবেই করব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জবি সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নূরনবী বলেন, জমি অধিগ্রহণের অন্য সমস্যা ক্যাম্পাসের আশপাশে কেরাণীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন ১২টা ভবন করেছেন। জমির দাম বেশি নেওয়ার জন্য। এজন্য ডিসি অফিস থেকে আমরা জানতে পারলাম জমি অধিগ্রহণে একটু জটিলতা আছে। টেন্ডারেও শাহীন চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ ছিল। তাই দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দিতে চাই আমরা। একই সঙ্গে তখন শিক্ষার্থী আব্দুর রাকিব বলেন, আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ যে অবস্থাই আছে তা সেনাবাহিনীকে দিতে হবে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে কীভাবে দেবেন সেটা আমাদের লিখিত দিতে হবে।
এ সময় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়গুলো আপনাদের থেকে শুনলাম। সচিবরা নতুন এসেছেন। ওনাদের তো সময় দিতে হবে। সবার আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেনাবাহিনীকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবনা আসতে হবে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ যে যে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বর্তমানে কাজের কী অবস্থা সেটাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানতে হবে। যতটুকু জানতে পারলাম, এটা একটা জটিল বিষয়। ডিসি অফিস, স্থানীয় রাজনীতির বিষয় আছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীকে কাজ দিতে কি কি প্রোসেস তার জন্য মিটিং করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যকে আমরা ডাকব। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভাইস চ্যান্সেলর থাকবেন, নাহিদ ইসলাম থাকবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা থাকবেন। সেনাবাহিনীকে কাজ দিতে কি কি প্রসেস আছে তা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
পরে শিক্ষার্থীরা প্রায় ১ ঘণ্টার মিটিং শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে চলে যাবার অনুরোধ করেন। দাবি আগামীকাল মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি দিবেন বলেও জানান তারা।
এমএল/এমএ