জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ : সেনাবাহিনীকে দিতে বাধা কোথায়?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণকাজের তেমন অগ্রগতি নেই। কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজের কাজ সেভাবে হয়নি। এ কারণে কাজটি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দ্রুত প্রথম প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন হলে প্রথম ও দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া যেতে পারে। তারা প্রশ্ন রাখেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজটি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে বাধা কোথায়?
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ২০১৮ সালে ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর টানা ছয় বছর চতুর্থ ধাপে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, মাস্টার প্ল্যান তৈরি, পরিকল্পনা ও প্রকৌশল ভবন নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পুকুর খনন, ঘাট নির্মাণ, লেক খনন, সংযোগ সেতু নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন নির্মাণ, গভীর নলকূপ নির্মাণ, বহিঃবিদ্যুতায়ন, প্রস্তাবিত স্থাপনার বিস্তারিত স্থাপত্য ও কাঠামোগত নকশা প্রণয়নে পরামর্শক নিয়োগ অন্তর্ভুক্ত। প্রথম প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা।
আরও পড়ুন
এদিকে, প্রথম প্রকল্পের কাজের টেন্ডার হয়ে যাওয়ায় সেনাবাহিনীকে এ কাজ দেওয়া অনেকটা অসম্ভব। তবে, দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার জন্য কিছুদিন ধরে ইউজিসিসহ সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
জানা যায়, টেন্ডার ও চলমান কাজগুলোর মধ্যে লেক ও পুকুর খননের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পরিকল্পনা ও প্রকৌশল ভবন নির্মাণকাজের ২৭ শতাংশ, সীমানা প্রাচীরের ৭২ শতাংশ, ভূমি উন্নয়নের ৪০ শতাংশ, ঘাট নির্মাণের ৭৫ শতাংশ এবং জমি অধিগ্রহণের ৯৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিংবা শুরু হয়নি।
তবে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, যে পরিমাণ কাজের অগ্রগতি হওয়ার কথা, তার চেয়ে কম বাস্তবায়ন হয়েছে।
কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, প্রথম প্রকল্পের ১৫টি কাজের মধ্যে সাতটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে কাজ চলমান। বাকি কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। কাজগুলো বিলম্ব হওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ হলো ভূমি অধিগ্রহণ। কাজটি ঢাকা জেলা প্রশাসকের হাতে ন্যস্ত। বাকি ১১ একর ভূমি অধিগ্রহণও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আলী আহমদ বলেন, প্রথম প্রকল্পের চলমান কাজটি ত্বরান্বিত করতে আমরা কাজ করছি। এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজের অনুমতি পাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ আমরা সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার জন্য কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। সম্প্রতি ইউজিসিতে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তবে, এটি প্রক্রিয়াধীন ও সময়সাপেক্ষ। বর্তমান প্রকল্পের বাকি কাজ যদি সেনাবাহিনী নিতে ইচ্ছা পোষণ করে, আমরা তাদের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত আছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি পুরোপুরি এক মত। আগামী সপ্তাহে পিআইসির মিটিং আছে। সেখানে এ বিষয়ে কথা হবে। আমরা বিষয়টি তুলব। সেনাবাহিনীর হাতে কাজ দিতে পারলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না।
এমএল/