ইবিতে বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে ভাঙচুর
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে বিভাগটির নামফলক ভেঙে ফেলেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। গত রোববার (২৭ অক্টোবর) বিভাগের সামনে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা ঢেকে নামফলক ভেঙে ফেলেন তারা। বিভাগের নাম পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি আবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে। সেই আবেদনের সিদ্ধান্ত জানাতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে- এমন অভিযোগে বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাংশ ওইদিন বেলা ১১টার দিকে বিভাগের নামফলক আংশিক ভেঙে ফেলেন।
এ ঘটনা অবগত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শাহিনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর প্রফেসর ড. মিন্নাতুল করিম, ও ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো ওবাইদুল ইসলাম বিভাগে এসে সভাপতির সঙ্গে বিষয়টি সমাধানে আলোচনা করেন। প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র উপদেষ্টা বিভাগ ত্যাগ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরেক দফা ভাঙচুর চালিয়ে বিভাগের নামফলক ভেঙে ফেলেন এবং নামফলকে ব্যবহৃত ধাতব অক্ষর সমূহ সরিয়ে ফেলেন। উক্ত ঘটনার সিসিটিভির কিছু অংশ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
ভিডিও ফুটেজে সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আব্দুর রহমান শোভন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, লিমন হোসেন, নাইমুর রহমান দুর্জয়, মোহাম্মদ আলী, আল-জাকারিয়া হোসাইন সাব্বির, রাফায়াত রিফাত ও সাফায়াত আল-কাফি, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. কবির হোসেন, তপু, তরিকুল ইসলাম হিমেল, পারভেজ, ওয়াসিম, রিক বিশ্বাস, মিফতাহুল জান্নাত নিলয়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের হাসান আলী, রেজওয়ান হোসেন, হাসিবুজ্জামান নয়ন, আবির হোসেন, ফারহান তানভীর, তাহমিনা ইয়াসমিন ইতি, মাকসুদা আক্তার সেতুসহ আরও অনেককে দেখা গেছে। প্রথমেই বিভাগের নামফলকের অদ্যক্ষর “জি” ভেঙে ছুড়ে ফেলে দেন আব্দুর রহমান হাসান শোভন। তারপরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সিসিটিভির নিচে অবস্থান নিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ আলাপ করে ও সিসিটিভি ক্যামেরাটি ঢেকে দেন।
জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর বিভাগের শিক্ষকদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার পর আবারও কিছু শিক্ষার্থীকে বিভাগের সামনে জড়ো হতে দেখা যায়। পরে বিভাগের কর্মচারীদের প্রশ্নের মুখে তারা বিভাগের সামনে থেকে দূরে সরে গিয়ে অবস্থান নেন। এ ঘটনায় শিক্ষকরা আতঙ্কে আছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, বিভাগের নাম পরিবর্তন করার কারণ হলো স্কলারশিপসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে বিসিএস বা ভূগোল বিষয়গুলোতে চাকরির ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে সুবিধা থাকায় শিক্ষার্থীরা এটি পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, আমরা বিষয়টি রিলেটেড বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবার মতামত অনুযায়ী নামটি পরিবর্তন হলে চাকরির ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়বে। এছাড়া পরিবর্তন করতে হলে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে সিন্ডিকেটে পাস করতে হয়। সেটির অপেক্ষা না করেই শিক্ষার্থীদের একাংশ নামফলক ভাঙা এবং শিক্ষকদের ওপর ক্ষিপ্ত আচরণ করছেন। এ থেকে বোঝা যায় একটি পক্ষ এটি নিয়ে রাজনীতি করছে।
বিভাগের সাবেক সভাপতি ইনজামুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে নাম পরিবর্তন করে ভূগোল ও পরিবেশ রাখা হয়েছিল। এটি সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছিল। বর্তমানে এ নামটি পুনরায় পরিবর্তনের দাবি তুলেছে একটি পক্ষ। নাম পরিবর্তন হলে শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ কমে যাবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। তারা বিচার বিশ্লেষণ করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন এটাই প্রত্যাশা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান শোভন বলেন, আমরা বিভাগের নাম পরিবর্তনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। তবে এটা নিয়ে কালক্ষেপণ করা হচ্ছিল। পরে শিক্ষার্থীরা নামফলক ভেঙে ফেলেন। অক্ষরগুলো আমাদের হেফাজতে আছে। আমরা পরে আবার লাগিয়ে দেব।
এ বিষয়ে বিভাগটির বর্তমান সভাপতি সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায়কে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহীনুজ্জামান বলেন, আমরা শিক্ষার্থী ও বিভাগটির শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়ে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটি শিক্ষার্থীরা মেনে নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের রড নিয়ে বিভাগে যাওয়া এবং শিক্ষকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিভাগ থেকে কিছু জানানো হয়নি। জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাকিব হোসেন/আরএআর