ছবি সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এবং এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে মানুষের যে আশাভঙ্গ হয়েছিল, গত তিন মাসেও তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এসব লক্ষণ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের ষোলোশহর রেলস্টেশনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি  এসব কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা অধিকার রক্ষা পরিষদের ব্যানারে এই সমাবেশ হয়।

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা যদি মনে করি, যে লঙ্কায় যায় সে–ই রাবণ হবে, তাহলে পরিবর্তন করে আর লাভ হলো না। এটি কী কারণে হয়, সেটি আমাদের বুঝতে হবে।’
 ‍
তিনি বলেন, কৃষক-শ্রমিকসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থ দেখার মতো রাজনৈতিক সংগঠিত শক্তি বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। তৈরি হয়নি বলেই এত বড় একটি মুক্তিযুদ্ধের পরে, লাখ লাখ মানুষ শহীদ হওয়ার পরেও, বাংলাদেশে শোষক-লুটেরা শ্রেণি আবার নতুন করে তৈরি হয়েছে। নব্বইয়ে গণ-অভ্যুত্থান হলো, এরশাদ গেল, কিন্তু লুটেরা শক্তি আবার ক্ষমতায় থাকল। তিন মাস আগে এত বড় গণ-অভ্যুত্থানের পরেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবন কিংবা ভবিষ্যৎ চিন্তায় সেই পরিবর্তনের লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে না।

সমাবেশে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি করার সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি ছাত্ররা দিনের পর দিন সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে রাখে, কিন্তু শ্রমিকেরা বকেয়া মজুরির দাবি জানালে আগের সরকারের মতো গুলি করছে, বিভিন্ন অপবাদ দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, এরা আওয়ামী লীগের লোকজন। আওয়ামী লীগ বললেই তো হবে না। আওয়ামী লীগ এখানে সুযোগ নিতেই পারে। সুযোগ নিতে সুবিধা তখনই হবে যখন এই সরকার আওয়ামী লীগের মতো ভূমিকা নেবে।’

দেশে ঢালাও মামলা হওয়ার কারণে আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে বড় বড় অপরাধীদের বেশ কয়েকজন ছাড়া পেয়ে গেল। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রভাবশালী একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এত বড় বড় অপরাধী ছাড়া কীভাবে পাচ্ছে? তিনি উত্তর দিলেন ‘আমি কিছু জানি না।’ তাহলে কারা জানে? সেটাও তিনি জানেন না। তাহলে সিদ্ধান্ত কীভাবে হচ্ছে? একদিকে দেখতে পাচ্ছি  বড় বড় অপরাধী  ছাড়া পাচ্ছে, অপরাধীরা দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে; অন্যদিকে এমন অনেকের নামে মামলা হচ্ছে, যাতে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।’

তিনি বলেন, ‘আগের সরকারের সময় আদালত সরকারের নির্দেশ দ্বারা পরিচালিত হতো। আদালত বলে কিছু ছিল না। আদালত এবং বিচারপ্রক্রিয়া যদি যথাযথ না হয় তাহলে একই ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার কথা বলছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া কীভাবে হচ্ছে, এটিই আমাদের অজানা।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা অধিকার রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক আসমা আক্তার। সংগঠনটির সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্রের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির উপদেষ্টা অধ্যাপক তাহুরিন সবুর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জি এইচ হাবীব, কবি ও সাংবাদিক আহমেদ মুনির, আন্দোলনে চোখ হারানো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শুভ, গৃহকর্মী নূপুর বেগম প্রমুখ।

সমাবেশে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, আর্থিক সহযোগিতা ও আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন, সরকারি খাসজমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা, গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াসহ ১০ দফা দাবি জানায় আয়োজক সংগঠন।

এমএ