বুয়েট শিক্ষককে স্ব-পদে পুনর্বহালের দাবিতে স্মারকলিপি
ছাত্রলীগের মাধ্যমে নির্যাতিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমকে স্ব-পদে পুনর্বহালের দাবিতে ভিসি বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেছে 'বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ' নামক শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
বিজ্ঞাপন
স্মারকলিপি প্রদানের পর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্মারকলিপি পাঠ করেন বুয়েট শিক্ষার্থী মীম ওয়ালীউল্লাহ।
এসময় তারা বুয়েট উপাচার্য প্রফেসর ড. এ.বি.এম. বদরুজ্জামানের কাছে ৫ দফা দাবি পেশ করেন।
আরও পড়ুন
দাবিগুলো হলো
১. সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। ড. জাহাঙ্গীরের উপর নির্যাতন, অপমান-অপদস্তকরন এবং বৈষম্যমূলক আচরণের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে বুয়েটের অর্ডিন্যান্স ও ফৌজদারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. অনতিবিলম্বে পুনঃযোগদান নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বিভিন্ন সময়ে বুয়েট প্রশাসনের অসহযোগিতা ও সাবেক প্রো-ভিসি আব্দুল জব্বারের প্রত্যক্ষ মদদে ক্রমাগত হুমকি-ধামকি এবং মামলা-গ্রেপ্তারের মতো অনৈতিক চাপের মাধ্যমে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয় ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে। তাই ওনার অব্যাহতিপত্র অনতিবিলম্বে বাতিলপূর্বক আগামী ৫ কর্মদিবস তথা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে পুরকৌশল বিভাগে স্বপদে সসম্মানে যোগদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. মৌলিক সুযোগ-সুবিধার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্য হয়ে বুয়েটের টিচার্স কোয়ার্টার ছাড়তে হয়, অনৈতিকভাবে বিভাগের কনসাল্টেন্সি থেকে বিরত রাখা, অন্যায়ভাবে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়াসহ মিথ্যা মামলায় প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই বুয়েট কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে পূর্বের বকেয়া সকল বেতন-ভাতা পরিশোধপূর্বক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি গ্রহণে সহযোগিতা, ফ্যাসিবাদের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা থেকে ড. মো: জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতের অব্যাহতি গ্রহণে বুয়েট প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বেশ কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের স্বনামধন্য শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রদত্ত স্ট্যাটাস সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যেখানে বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে তার উপর হওয়া নানা অন্যায় ও বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন তিনি।। যার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও ভিক্টিমের সঙ্গে আমরা 'বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশল পরিষদ' যোগাযোগ করে এর সত্যতা পাই।
এ অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশল পরিষদ' এর পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতন, নিপীড়নমূলক আচরণ এবং বৈষম্যের ঘটনাগুলো নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
বুয়েটের তৎকালীন প্রশাসনের মদদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রক্ষায় ব্যর্থতা, হয়রানিমূলক মামলা এবং সম্মানিত শিক্ষকের পেশাগত জীবনে ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতি আঘাত করা হয়েছিল। যার পরিক্রমায় বুয়েটে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেই সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মতো একজন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্রকে খুন হতে হয়েছে।
অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে তার মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে বলা হয়, সম্প্রতি জুলাই বিপ্লবের পর বর্তমানে পরিবর্তিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশে বুয়েটের শিক্ষক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের উপর হওয়া নিপীড়নমূলক প্রতিটি আচরণের তদন্ত ও বিচার এবং একই সঙ্গে তাকে তার সকল মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে উক্ত ষড়যন্ত্রে জড়িতদের চিহ্নিতপূর্বক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
কেএইচ/এমএসএ