দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দীর্ঘদিন ধরে চলা পলিটিক্যাল ব্লক এবং কৃত্রিম সিট সংকটের অবসান ঘটছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভিন্ন এক চিত্র ফুটে উঠেছে। যেখানে নবীন শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে সিঙ্গেল সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে হলগুলোতে আর কোনো গণরুমের অস্তিত্ব নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পলিটিক্যাল ব্লকের রুমগুলো দখলে রেখে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী চাঁদাবাজি, মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা এবং নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। তাদের অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ ও একাধিকবার অকৃতকার্য হলেও হলের ছায়া প্রশাসন হিসেবে কাজ করতো। একজনের দখলে একাধিক রুম থাকার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের হলে সিট পাওয়ার নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে তারা বেশ কিছু রুম দখলে রেখেছিল। এতে কৃত্রিম সিট সংকট তৈরি হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণরুমে ঠাঁই নিতে হতো।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস গত ২১ জুলাই শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় তিন মাস পিছিয়ে ক্লাস শুরু হবে ২০ অক্টোবর। এতে প্রায় দুই হাজার নতুন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এসেছে। প্রতিটি আবাসিক হলে নবীন শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে শিক্ষার্থীরা তাদের বরাদ্দ সিটে উঠতে পারছেন এবং কোনো হলে গণরুমের চিহ্ন নেই। কোনো কোনো হলের পক্ষ থেকে মিষ্টি ও ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। হলে শিক্ষার্থীদের কক্ষে গিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আগে গণরুমে থাকার কষ্টের অনেক গল্প শুনেছি। গাদাগাদি করে থাকা ও পড়াশোনা করা কঠিন হতো বলে শুনতাম। এবার সিঙ্গেল সিট পাওয়ায় খুব স্বস্তি পাচ্ছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে এ বছর নবীন শিক্ষার্থীদের শতভাগ সিট নিশ্চিত করতে পেরেছি। প্রত্যেককে সিঙ্গেল সিট দেওয়া হয়েছে। আমরা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে আমরা বিভিন্ন দায়িত্ব পেয়েছি। তাদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে গণরুম বিলুপ্ত করে র‌্যাগিং ও মাদক নির্মূলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় এ উদ্যোগগুলো অব্যাহত থাকবে।

মেহেরব হোসেন/আরএআর