বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া, আন্দোলনে যেতে বাঁধা ও হুমকি প্রদান, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের তথ্য প্রদান, নীল দলের মিছিলে অংশ নেওয়াসহ নানা অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষক ক্লাসে থাকলে সেখানে উপস্থিত না থাকারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ৭৯ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বয়কটের তালিকায় রয়েছেন। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিভিন্ন সেমিস্টারের ক্লাস, পরীক্ষাসহ নানা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে পতন হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এর আগে তার নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলা চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্দেশে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করে। এ সময়ও অধিকাংশ শিক্ষককে নীরব থাকতে দেখা যায়। হাতেগোনা অল্প কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালেও সেটা ছিল নগণ্য। এ সময় নীল দলের শিক্ষকরা আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন বা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। তাছাড়া, অনেক শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া ছাড়াও শিক্ষার্থীদের ‘ক্যারিয়ার দেখে নেওয়া’র হুমকিও দেন।

ফলশ্রুতিতে, শেখ হাসিনার ভারতে পলায়নের পরেই শিক্ষার্থীরা এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। আন্দোলনের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া ক্যাম্পাস গত ২২ সেপ্টেম্বর চালু হলেও বিতর্কিত এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরালো করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বিভাগগুলোও এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, ইংরেজি, বাংলা, দর্শন, ইসলামিক স্টাডিজ, উর্দু, আরবি, ইতিহাস, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, টেলিভিশন ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, শান্তি ও সংঘর্ষ, পপুলেশন সায়েন্সেস, লোক প্রশাসন, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালটি ম্যানেজমেন্ট, ফিন্যান্স,  অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ, মনোবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, মৎস্যবিজ্ঞান, গণিত, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি, এপ্লাইড কেমিস্ট্রি, চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগ, শিল্পকলার ইতিহাস, গ্রাফিক্স ডিজাইন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, হোম ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষকের ক্লাস বর্জন ও তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকেই বিভিন্ন বিভাগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও কিছু বিভাগে চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানানো হয়। অনেক শিক্ষক স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলেও কিছু শিক্ষক স্বেচ্ছায় অব্যাহতি না নিলে শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের বয়কটের জেরে আইন বিভাগের চারজন শিক্ষককে বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা হলেন, অধ্যাপক রহমতুল্লাহ, অধ্যাপক জামিলা আহমেদ চৌধুরী, প্রভাষক আজহার উদ্দিন ভূঁইয়া, প্রভাষক শাহরিমা তানজিম অর্নি। তাদের ১৩-১৭ ব্যাচের ক্লাস, পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ, খাতা মূল্যায়নসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

কলা অনুষদের ১১ বিভাগের অন্তত ২৪ জন শিক্ষককে বয়কট করেছে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগে শিক্ষার্থীরা বয়কট করেছেন ছয় শিক্ষককে। এর মধ্যে ব্যাপক অভিযোগ থাকায় অধ্যাপক ড. ফাজরীন হুদাকে সব ধরনের বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচজন শিক্ষককে আন্দোলন চলাকালীন সরকারের পক্ষ নিয়ে নানা প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেটি না করায় তাদের কোনো ক্লাসে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। এই পাঁচ শিক্ষক হলেন, ইনজামাম মাহবুব, সাদিয়া আফরিন, দেবাশিষ দাস, নিলয় রায় ও রহিমা আক্তার।

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলীমা আক্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা এবং সহযোগী অধ্যাপক মন্দিরা চৌধুরী। বিভাগের ১৩ থেকে ১৭তম ব্যাচে তারা কোন পরীক্ষা বা ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন না। তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির মুখে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে চলমান পাঁচটি ব্যাচের সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই রেবেকা সুলতানার ক্লাস বর্জন করেছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷

পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজের প্রভাষক মো. রাকিবুল হাসান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২ জন অধ্যাপক আবদুল বাছির ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল্লাহ কাদেরীকেও বয়কট করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ তালিকায় রয়েছেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারজানা আফরীন, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম সানা ও মোহাম্মদ ইমাউল হক সরকার, উর্দু বিভাগ থেকে অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল ইসলাম।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও নীল দলের আহ্বায়ক ড. এ. এম. আমজাদ এবং অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলমকে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের কটূক্তি, ছাত্র-জনতা হত্যায় শিক্ষার্থীদের দায়ী করার অভিযোগে আগামী দুই সেমিস্টারের বিভাগীয় ক্লাস, পরীক্ষা ও টিউটোরিয়াল থেকে তাদের বিরত থাকার জন্য বলা হয়। তাছাড়া তাদের চলমান চারটি ব্যাচের (ব্যাচ ১৪-১৭)-এর ক্লাস পরীক্ষা ও টিউটোরিয়াল ক্লাস থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

আরবি বিভাগের ৪ জন শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ড. ইউসুফ, ড. মারুফ ও ড. বেলালকে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা ও হুমকি, দুর্নীতির অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাছাড়া, ড. নাসিরকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও চরম দুর্ব্যবহার, নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়। এদের মধ্যে শুধু অধ্যাপক ড. ইউসুফের দুর্নীতি, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও হুমকি প্রদানের জন্য তার স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৮টি বিভাগ থেকে বয়কটের মুখে পড়েছেন অন্তত ১৯ জন শিক্ষক। তারা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের  অধ্যাপক ড. মামুন আল মোস্তফা ও নিলুফার পারভীন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান, অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. খাইরুল চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মাহমুদা খাতুন। শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের দুইজন হলেন, অধ্যাপক সাবের আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক শাহরিয়ার ও মারিয়া হোসাইন, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হোসাইন মোহাম্মদ আহসান ও অধ্যাপক ড. সাদিক হাসান, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের মুহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সুমাইয়া ইকবাল ও এ বি এম নাজমুস সাকিব।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লিলুফার ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নীরব থাকা ও প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা রাখার অভিযোগ ওঠেছে। বিভাগটির সাবেক এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার পর সব শিক্ষক ভুক্তভোগীর পক্ষে অবস্থান নিলেও তিনি নেননি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সম্প্রতি চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন ওই শিক্ষক।

অধিকাংশকেই শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১৮-১৯ সেশন থেকে ২২-২৩ সেশনের (১৩-১৭ ব্যাচ) সকল ব্যাচের ক্লাস, পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ, খাতা মূল্যায়নসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অন্তত ১৩ জন শিক্ষকের ক্লাস-পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান (সাবেক উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ও মো. আবুল কালাম আজাদ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক সুমন দাস, শবনম জাহান ও মো. মোশাররফ হোসেন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালেদ বিন আমির, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মো. আফজাল হোসেন ও সামশাদ নওরীন, ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক শেখ তানজিলা দীপ্তি, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আক্তার, অধ্যাপক মো. মুশফিকুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও মো. জামিল শরীফ, জীববিজ্ঞান অনুষদের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নীল দলের শিক্ষক মো. হারুনর রশীদ খানের ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

জীববিজ্ঞান অনুষদের ২ শিক্ষককে বয়কট করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা হলেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমল হোসেন ভুঁইয়া, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুর রহমান। তাছাড়া, মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আন্দোলন চলছে৷

বিজ্ঞান অনুষদের গণিত বিভাগের চন্দ্রনাথ পোদ্দারকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্লাস থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জীব বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান, অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রির অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফরোজা শেলী ও অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলামের ক্লাসও বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা৷

চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলামসহ দুইজন এবং শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষককে বয়কট করলেও পরবর্তীতে দুপক্ষের সমঝোতায় তারা ক্লাসে ফিরেছেন। তাছাড়া, গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের সিদ্ধার্থ দে-কে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইনস্টিটিউটের ৪ জন বয়কটের শিকার হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চান ও মাহবুবুর রহমান লিটুর বিরুদ্ধে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের প্রভাষক ফারিহা কাদির ও প্রভাষক মোহাম্মদ ইহসান-উল-কবিরকেও বয়কট করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া, হোম ইকোনমিকসে ২ শিক্ষককে বয়কট করেছে শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীল দলের এক শিক্ষক বলেন, আমাদের কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন। যার ফলে শুধু সাপোর্টার হিসেবে থাকা নীল দলের অনেক শিক্ষককে বয়কট করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও প্রথম দিকে শিক্ষার্থীরা কথা তুলেছিল কিন্তু আমি শিক্ষার্থীদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিতে না পারলেও কখনো বিরোধিতা করিনি। সুন্দরভাবে যেন বিষয়টি সমাধান হয়, কারো রক্ত যেন না ঝরে সেই আশা করেছি। ফলে আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আর ক্ষোভ থাকেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, বিভিন্ন বিভাগে আন্দোলন কেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের ঝামেলার কথা আমাদের কাছে এসেছে। অনেক শিক্ষকের ক্লাস করবে না বলেও শিক্ষার্থীরা একমত ছিল। পাঁচটি স্তরে এটি নিরসনের পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের। বিভাগ, অনুষদসহ অন্যান্য মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান না হলে বিষয়টি সিন্ডিকেট আসবে। তখন অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি যাতে শতভাগ স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতার সঙ্গে হয় সেটি আমরা নিশ্চিত করব।

কেএইচ/এসকেডি